সন্তান রেখেই সিজার সমাপ্ত
কুমিল্লায় টিউমার ভেবে প্রসূতির পেটে সন্তান রেখেই সিজারিয়ান অস্ত্রপচার সমাপ্ত করার ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগে তোলপাড় চলছে। এরই মধ্যে এ অপারেশনের সার্জন ডা. শেখ হোসনে আরা বেগমের দায়িত্ব পালনে গাফিলতির বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মঙ্গলবার তাকে শোকজ এবং ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যদের তদন্ত কমিটি করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
এ বিষয়ে প্রতারিত ওই রোগীর পরিবার সংশ্লিষ্ট ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর জেলার হোমনা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের আউয়াল হোসেনের স্ত্রী খাদিজা আক্তারকে (২২) দাউদকান্দির গৌরীপুর লাইফ হসপিাটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজারিয়ান অপারেশন করেন দাউদকান্দির বিটেশ্বর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে প্রেষণে থাকা মালিগাঁও ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. শেখ হোসনে আরা। ওই অপরারেশনে এনেসথেসিয়া প্রয়োগ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মঞ্জুরুল আলম।
খোদেজার মা আমেনা বেগম জানান, তার মেয়ের গর্ভে ২টি সন্তান থাকলেও সিজারিয়ান অপারেশন করে ১টি সন্তান বের করে অপরটি টিউমার বলে সিজারিয়ান কার্যক্রম সমাপ্ত করেন ডা. শেখ হোসনে আরাসহ অপারেশন থিয়েটারে থাকা অন্যান্যরা। পরবর্তীতে তার মেয়ে খাদিজা দীর্ঘ প্রায় এক মাস যাবত পেটে আরও একটি মৃত সন্তান রেখেইে টিউমার ভেবে বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে যান।
গত ৫/৬ দিন আগে ওই প্রতারিত প্রসূতি মা হোমনা উপজেলা সদরের একটি ক্লিনিকে আলট্রাসনোগ্রাফি করার পর জানতে পারেন তার পেটে টিউমার নয় আরও একটি মৃত সন্তান রয়েছে।
এরপরই রোগীর পরিবার ছুটে যান দাউদকান্দির লাইফ হসপিাটাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডা. শেখ হোসনে আরার কাছে। তারা রোগীর সঙ্গে সমঝোতা করে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে চায়। কিন্তু রোগীর মা আমেনা বেগম বিষয়টি দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের অবগত করার পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে পড়ে।
রোগীর মা আমেনা বেগম আরও জানান, লাইফ হসপিটালের আকবর মোল্লা নামের এক ব্যক্তি তার মেয়ে খাদিজা আক্তারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন, বর্তমানে তার সঙ্গে রয়েছেন খাদিজার ১ মাস ৫ দিন বয়সী মেয়ে আদিবা ইসলাম আলফান।
এ বিষয়ে ডা. শেখ হোসনে আরা বলেন, যা বলার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাই বলবেন। আমার কিছুই বলার নেই।
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মো. জালাল হোসেন বলেন, এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ওই ডাক্তারকে শোকজ প্রদান ও ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন, দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. ফরজানা ইসলাম, মালিগাঁও ২০ শয্যা হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. মো. শরীফ মুশফেকুর রহমান ও দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. শাহিনুর আলম সুমন।
তিনি আরও জানান, যে প্রাইভেট হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটেছে এর কোনো অনুমোদনপত্র (লাইন্সেস) নেই, ডাক্তার ও নার্স বিহীন চরম অনিয়মের মধ্য দিয়ে এই হাসপাতালটি পরিচালনা করা হচ্ছে, তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
কামাল উদ্দিন/এফএ/আইআই