বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত সমসখলসির পাখি কলোনি
অবিরাম বর্ষণ আর ঝড়ে গত দু’দিনে নাটোরের নলডাঙ্গার সমসখলসি পাখি কলোনিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে এখন পর্যন্ত ৭২টি পানকৌড়ি এবং ২৫টি শামুকখোল পাখির বাচ্চা মারা গেছে। এছাড়া আহত হয়েছে অন্তত তিন শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
এদিকে সমসখলসির পাখি কলোনি রক্ষার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন। স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের সহযোগিতায় উদ্ধারকৃত পাখীগুলোকে রোদে সুস্থ করে আবার ছেড়ে দেয়া হবে।
পাখি কলোনির বাসিন্দা জিয়াউল আলম জানান, সমসখলসি গ্রামের পাখি কলোনিতে পানকৌড়ি, শামুকখোলসহ অন্তত ১০ হাজার পাখি পুকুরের দু’ধারে বাঁশঝাড়সহ বিভিন্ন গাছকে আশ্রয়স্থল হিসেবে নিয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই ওইসব প্রজাতির পাখিগুলো এখানে বসবাস করছে। কিন্তু গত দু’দিনের অবিরাম বর্ষণ এবং প্রচণ্ড ঝড়ের কারণে পাখিগুলো মাটিতে পড়ে যায়। এসময় কিছু অসাধু লোকজন পাখিগুলো ধরে বাড়িতে নিয়ে যায়। কেউ আবার জবাই করে।
পরে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস এবং বনবিভাগের কর্মকর্তারা এসে অন্তত তিন শতাধিক পাখি উদ্ধার করে। কিছু পাখির প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়েও দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঝড়ে মাটিতে পড়া অর্ধশতাধিক পানকৌড়ি এবং শামুকখোল বাচ্চা বাড়িতে রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ঝড়ে পড়ে যাওয়ার কারণে অনেক পাখির ডানা ভেঙে গেছে, বাচ্চাগুলো মাটিতে পড়ে রয়েছে। মাটিতে পড়ে যাওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত শতাধিক পানকৌড়ি এবং শামুকখোলের বাচ্চা মারা গেছে। কিছু পাখির বাচ্চা ভিজে যাওয়ার কারণে আগুনের স্যাক দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া ভালো হলে সুস্থ করে পরে সেগুলো আবার ছেড়ে দেয়া হবে।
নলডাঙ্গা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, খবর পাওয়ার পর স্থানীয় লোকজনদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাখিগুলোকে উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে পাখিগুলো আহত অবস্থায় স্থানীয় একটি পরিত্যাক্ত বাড়িতে রাখা হয়েছে। আজ সকাল থেকে একটু রোদের মুখ দেখা গেছে। সেগুলোকে রোদে রেখে সুস্থ করে আবার ছেড়ে দেয়া হবে।
ঘটনাস্থল থেকে নাটোর সদর বনবিভাগের নার্সারি এটেনডেন্ট আলীমুদ্দিন সরদার জানান, ঝড়ে এবং বৃষ্টিতে অনেক পাখি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অনেক পাখির বাচ্চাও মারা গেছে। অসুস্থ পাখিগুলোকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাছাড়া আহত পাখিগুলোকে সুস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
নলডাঙ্গা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা হাসান বলেন, আমি খবর পাওয়ার পর সমসখলসি পাখি কলোনি পরিদর্শন করেছি। পরিদর্শন করে স্থানীয় বনবিভাগ এবং প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাদের পাখিগুলোকে সুস্থ করার নির্দেশ দিয়েছি। তাছাড়া কোনো অসাধু ব্যক্তি যাতে পাখি ধরতে না পারে, সেজন্য স্থানীয়দের সতর্ক করা হয়েছে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন জানান, পাখি কলোনিকে রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউএনওসহ অন্যদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তারা পাখিগুলোকে উদ্ধার করেছে।
রেজাউল করিম রেজা/এফএ/এমএম