ছাত্রলীগ কর্মী মিয়াদ খুন, আটক ফখরুল কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ০৩:৫৭ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

সিলেটে ছাত্রলীগ কর্মী ওমর ফারুক মিয়াদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। মিয়াদের মরদেহ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের বালিশ্রি গ্রামে দাফন শেষে স্বজনদের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন শাহপরান থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন।

তিনি বলেন, আসামি গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। ঘটনার দিন সোমবার ফখরুল ইসলাম নামের একজনকে আটক করা হয়। মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে ওসি বলেন, ওইদিন ওসমানী হাসপাতাল থেকে আটক করা হয়। আটকের কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিহত মিয়াদের পক্ষের লোকজনের অভিযোগে তাকে আটক করা হয়।

পুলিশের একটি নির্ভরযোগ সূত্র জানায়, মিয়াদ খুনের ঘটনায় যে-বা যারা জড়িত তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাদের গ্রেফতার করতে পুলিশের বিশেষ কয়েকটি টিম অভিযানে নেমেছে।

এদিকে ছাত্রলীগ কর্মী মিয়াদ খুনের ঘটনায় সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম. রায়হান চৌধুরীর গ্রেফতার দাবি করেছে ছাত্রলীগের একাংশ। একইসঙ্গে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সিলেটের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার মিয়াদ হত্যার প্রতিবাদে নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় বিক্ষোভ শেষে ছাত্র ধর্মঘটসহ চারদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিক্ষোভকারীরা। ওমর আহমদ মিয়াদ নিহত হওয়ার জেরে নগরীতে জেলা ছাত্রলীগের একাংশ মাথায় কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ করেন।

মঙ্গলবার দুপুরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মিয়াদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। বিকেল ৩টায় ময়নাতদন্ত শেষে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মরদেহসহ বিক্ষোভ মিছিল বের করেন সিলেট নগরের চৌহাট্টায় আসেন নেতাকর্মীরা। সেখানে সমাবেশ করেন টিলাগড় ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। সমাবেশে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম ৪ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

মিয়াদের পরিবার সূত্র জানায়, ৩ ভাই ২ বোনের মধ্যে মিয়াদ ছিলেন দ্বিতীয়। আর ভাইদের মধ্যে সবার বড়। গত সোমবার রাতে মিয়াদের বাড়িতে গেলে দেখা যায় কান্নার মাতম। পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী আর রাজনৈতিক সহকর্মীরা জড়ো হয়েছেন বাড়িতে। সকলের চোখেই জল। আর ভাইকে ফিরিয়ে দেয়ার আকুতি জানিয়ে চলছেন মিয়াদের বোনেরা।

মিয়াদের বাবা আকুল মিয়ার বলেন, আমি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের বালিশ্রি গ্রামের বাসিন্দা। স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকি। পড়ালেখার জন্য ছেলেমেয়েদের সিলেটে বাসা ভাড়া করে দিয়েছি। সপ্তাহে বা দুই সপ্তাহে সিলেটে আসি ছেলে-মেয়েদের দেখতে। গত সোমবারই আকুল মিয়া সিলেটে আসেন ছেলে-মেয়েদের বাসায়। সকালে বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে দুপুরে বাসায় পৌঁছেন তিনি। মিয়াদ তখন বাসায় ছিল না। এরপর ঘটনা। খবর পেয়ে ছুটে যাই হাসপাতালে। দেখতে পাই আমার মিয়াদ আর নেই।

গত সোমবারের হামলায় মিয়াদের সঙ্গে তার আরও দুই বন্ধুও আহত হন। তারা হলেন, নাসিম ও তারেক। এদের মধ্যে তারেকের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। নাসিমের পায়ে ছুরির আঘাত আর তারেকের পেটে ৫-৬টি উপর্যুপরি ছুরির আঘাত করা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্র জানায়।

মিয়াদের আরেক বন্ধু রাহাত আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তিনি, মিয়াদ, তারেক ও নাসিম ২টি মোটরসাইকেলযোগে টিলাগড় যাচ্ছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতা কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের অফিসের সামনে যাওয়ার পর তার মোটরসাইকেল পার্কিং করার সময় তোফায়েল নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী প্রথমে এসে তাদের একজনকে ঘুষি মারেন। এ সময় মিয়াদ সাইকেল থেকে নেমে ওকে জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে? এ কথা বলতেই তোফায়েল ছুরি দিয়ে মিয়াদের বুকে আঘাত করে।

এ সময় তোফায়েল ও তার সঙ্গীরা তারেক এবং নাসিমকেও ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। বুকে ছুরিকাঘাতের কারণে মিয়াদের মুখ দিয়ে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়। পাশেই আরও ২০-২৫ জন কর্মী ছিলেন বলে জানান রাহাত।

তিনি বলেন, ছুরিকাঘাত করেই ওরা পালিয়ে যায়। তখন মিয়াদকে নিয়ে ওসমানী মেডিকেলে নেয়া হয়। ডাক্তাররা বলেন, মিয়াদ আর নেই।

উল্লেখ্য, সোমবার বিকেলে নগরীর টিলাগড়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের কর্মীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন ওমর আহমদ মিয়াদ (২৬) নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী। এতে আহত হন আরও দুই কর্মী। মিয়াদ লিডিং ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ছাত্র।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা বলেন, তদন্তের স্বার্থে সবকিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আসামি গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

ছামির মাহমুদ/এএম/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।