৭ ফুট ৮ ইঞ্চির সেই কিশোরের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন সাংসদ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৩:২৫ এএম, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

জাইগানটিজমে আক্রান্ত হয়ে বয়সের তুলনায় অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে দেশব্যাপী আলোচিত কক্সবাজারের রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল গ্রামের কিশোর জিন্নাত আলীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।

১৯ বছরেই ৭ ফুট ৮ ইঞ্চি জিন্নাত আলী’ শিরোনামে জাগো নিউজে বৃহস্পতিবার রাতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর এটি ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য গণমাধ্যমেও। এতে ‘টক অব দ্য কান্ট্রিতে’ পরিণত হয় জিন্নাত আলী। বিষয়টি নজরে এলে কক্সবাজার সদর আসনের সাংসদ জিন্নাত আলীর স্বাভাবিক জীবনের আশায় তাকে সহায়তার আশা প্রকাশ করেন।

গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, গণমাধ্যমে সংবাদ দেখে সাংসদ কমল জিন্নাত আলীর চিকিৎসায় সহায়তার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। তার নির্দেশে শুক্রবার জিন্নাত আলীকে বাড়ি থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় প্রথমে রামুর ওসমান ভবন এবং পরে কক্সবাজারের লালদীঘিরপাড়স্থ নিদ মহলে নিয়ে সাংসদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো হয়।

এমপির বরাত দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, জিন্নাত আলীর পরিবারকে নগদ দুই লাখ টাকা এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা ছাড়াও তার যাবতীয় ভরণ-পোষণের প্রতিশ্রুতি দেন এমপি।

রামু উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়া বলেন, জিন্নাত আলীকে উন্নত চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য কক্সবাজারে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

জিন্নাত আলী কক্সবাজারের রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল গ্রামের কৃষক আমির হামজার ছেলে। ভোলা জেলার ৭ ফুট ৭ ইঞ্চির মোসলেম উদ্দিনকে ছাড়িয়ে দেশের সবচেয়ে লম্বা মানুষটি এখন প্রত্যন্তাঞ্চলের জিন্নাত।

জিন্নাত আলী বলেন, আমার বড় সমস্যা শারীরিক দুর্বলতা, দুই হাঁটুতে ব্যথা। দারিদ্র্যের কারণে খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করতে না পারলেও প্রচুর খেতে ইচ্ছা করে।

এছাড়াও অস্বাভাবিক উচ্চতার কারণে ঘরে ঢুকতে বা বিভিন্ন কাজ করতে সমস্যা হয় জিন্নাতের। পায়ের মাপের জুতা বাজারে না পাওয়ায় খালি পায়েই হাঁটতে হয়। রাস্তায় হাঁটা চলার সময় মানুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তবে এতে তার ভালোই লাগে।

জিন্নাতের মা শাহপুরা বেগম বলেন, ছেলে লম্বা হওয়ায় খাদ্য চাহিদাটাও বেশি। তবে শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। মাথায় টিউমার, ডান পায়ে পচন ধরেছে। ডান পায়ের চেয়ে বাম পা দুই ইঞ্চি খাটো। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করানোও সম্ভব হচ্ছে না। তাদের পরিবারে ভিটে মাটি ছাড়া আর কোনো অর্থ সম্পদও নেই।

বাবা আমির হামজা বলেন, ছেলে অস্বাভাবিক লম্বা হওয়ায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়াও মুশকিল। রিকশা, সিএনজি, মাইক্রো, জিপ গাড়িতে বসানো যায় না। চিকিৎসার জন্য গত এক বছর আগে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেয়ার পর তার রোগটির নাম বলা হয় জাইগানটিজম। এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল। ফলে টাকার অভাবে আবারও বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে জিন্নাতের শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। তবে এখন এমপি সাহেব ছেলের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ায় একটু স্বস্তি বোধ করছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, পরিবারের পক্ষে তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হতো না। এমপি মহোদয়ের মতো সরকারের সুদৃষ্টিও যদি তার উপর পড়ে হয়তো স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা পাবে জিন্নাত।

উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং রোহিঙ্গাদের রোগ প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রমের সমন্বয়কারী ডা. মিসবাহ উদ্দিন আহমেদের মতে জাইগানটিজম বা দৈত্যকার মূলত একটি টিউমার সংক্রান্ত রোগ। শরীরে অবস্থিত টিউমারের প্রভাবে অতিরিক্ত হরমোন নিঃসরণ হয়। এতে শরীর অস্বাভাবিক লম্বা হয়। স্তরভেদে চিকিৎসার মাধ্যমে টিউমারটি সরিয়ে ফেললে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

সায়ীদ আলমগীর/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।