আব্দুন নুরকে ভয় পায় সহপাঠীরা
সিলেটের জকিগঞ্জে বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছে আব্দুন নুর নামে এক স্কুলছাত্র। সে উপজেলার বারঠাকুরী ইউনিয়নের তিনগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। বিরল এ রোগের নাম প্রজেরিয়া বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বাংলাদেশের মধ্যে জকিগঞ্জেই প্রথম এ রোগ ধরা পড়েছে।
স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে ড্রেস পরে বসে আছে আব্দুন নূর (১০) নামের অস্বাভাবিক আকৃতির এক শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থীর শরীরের চামড়াশুষ্ক ও ঝুলে পড়ছে, মাথা বড়, চুল ও চোখের উপরে ভ্রু নেই। মুখটাও ছোট, হাত ও আঙ্গুলের হাঁড়গুলো স্পষ্ট ভেসে উঠেছে, চলাফেরায় ধীরগতি। চেহারা দেখতে ২৫/৩০ বছরের বয়স্ক মানুষের মত লাগে। ছেলেটি কজাপুর গ্রামের প্রবাসী আব্দুল বাসিতের ছেলে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান চিকিৎসক ডা. আব্দুল্লাহ আল মেহেদী বলেন, এ রোগটি প্রজেরিয়া (Progeria) নামের জিনঘটিত একটি বিরল রোগ। এ রোগে আক্রান্ত অল্প বয়সের শিশুগুলোকে দেখতে বয়স্ক মনে হয়। আমাদের দেশে এ ধরনের কোনো রোগীর সন্ধান ইতোপূর্বে মেলেনি। জকিগঞ্জেই প্রথম এই ধরনের রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এটি বংশানুক্রমিক বা উত্তরাধিকারসূত্রের কোনো রোগ নয়।
তিনি বলেন, এ রোগ নিরাময়ে কোনো চিকিৎসাই সফল হয়নি। রোগটি চিহ্নিত করা গেলেও তার চিকিৎসা জানা নেই। পজেরিয়া রোগে আক্রান্ত শিশুরা গড়ে ১৩-১৫ বছর বাঁচে।
তিনগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হীরন্ময় নাথ জানান, বিরল রোগে আক্রান্ত এই শিক্ষার্থী লেখাপড়ায় অনেকটা মেধাবী। সে কথা বলে খুবই আস্তে। অন্য শিক্ষার্থীরা রোগাক্রান্ত এ ছাত্রকে ভয় পায়।
শিশুটির মা রাবিয়া বেগম বলেন, এ রোগটি শিশুটির জন্মগত। রোগটি থেকে রেহাই পেতে অনেক চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়েছি। কিন্তু নিরাময় হয়নি। চিকিৎকরা জানিয়েছেন- এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই।
জকিগঞ্জ উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম সিরাজী বলেন, আমার চাকরি জীবনে এ রোগে আক্রান্ত কোনো শিশু দেখিনি। আমরা এই শিক্ষার্থীকে প্রতিবন্ধীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
ছামির মাহমুদ/আরএআর/আইআই