বিয়ে করে বাংলাদেশে এসে কারাগারে ভারতীয় তরুণী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ১০:৫০ এএম, ১২ অক্টোবর ২০১৭

ধর্ম ছেড়ে শবনম পারভীন থেকে হয়েছেন বুল্টি মন্ডল। আর পিতৃভূমি ভারত ত্যাগ করে এসেছেন বাংলাদেশে। প্রেমের কারণে ধর্ম ও দেশ ছাড়লেও, ছাড়া পায়নি পুলিশের হাত থেকে। অবৈধ পথে বাংলাদেশে আসার অভিযোগে তার ঠাঁই হয়েছে যশোর কারাগারে। বুধবার বিকেলে কেশবপুর থানা পুলিশ তাকে আটক করে বৃহস্পতিবার জেলে পাঠিয়েছে।

শবনম পারভীন ওরফে বুল্টি মন্ডলের বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হাবড়া থানার মারাকপুর এলাকায়। তার বয়স ২২ বছর। হাবড়া শ্রী চৈতন্য কলেজের বিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। পড়ালেখার ফাঁকে তিনি একটি কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার ছিলেন। বাবা আতিয়ার রহমান পঞ্চায়েতের সদস্য ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা।

সাত বছর আগে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাবড়া এলাকায় যাওয়া যশোরের কেশবপুরের বিষ্ণু মন্ডলের সাথে তার প্রেমর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কালীঘাটে শাখা সিঁদুর পরে বিয়েও করেছেন বিষ্ণু-বুল্টি। কিন্তু বুল্টির পরিবার বিয়ে মেনে নেয়নি। এজন্য তারা দুজনে অবৈধ পথে বাংলাদেশে চলে আসেন। তবে এ দম্পত্তির পিছু ছাড়েনি পুলিশ। জেলে পাঠিয়েছে দেশান্তরী হওয়া শবনম পারভীন ওরফে বুল্টি মন্ডলকে।

বিষ্ণু মন্ডল বলেন, ‘প্রায় সাত বছর আগে তিনি অবৈধ পথে ভারতে যান। হাবড়ায় আত্মীয়ের বাসা থেকে তিনি স্কুলে ভর্তি হন। দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেছেন। সেখানে তিনি একটি ইলেট্রিকের দোকানে থাকতেন। ভারতে যাওয়ার পর থেকে শবনম পারভীন ওরফে বুল্টি মন্ডলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারপর ভালোবাসা থেকে বিয়ে।

কেশবপুর থানা হাজতে শবনম পারভীন বুল্টি সাংবাদিকদের জানান, তিন মাস আগে হাবড়ায় তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়। সেখানে ধর্ম কোনো বাধা নয়। কিন্তু নিজের ও স্বামীর নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রায় ২ মাস আগে কলকাতা কালিঘাট মন্দিরে গিয়ে শাখা ও সিঁদুর পরেন। নাম দেন বুল্টি মন্ডল। মন্দিরের পুরোহিত তার ধর্মান্তরিত হওয়ার কথা জানেন না।

এরপর রাতের আঁধারে কাটাতার পেরিয়ে সাতক্ষীরার কলারোয়া হয়ে তারা চলে আসেন স্বামীর বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সারগদত্তকাটি গ্রামে। সেখান থেকে তাকে আটক করা হয়। বাবার তিন সন্তানের মধ্যে বুল্টি দ্বিতীয়। এসব কথা বলার সময় তাকে অত্যন্ত দৃঢ়চেতা মনে হচ্ছিল বুল্টিকে। তিনি অন্তঃসত্ত্বা বলেও দাবি করেন।

বুল্টির বাবার বন্ধু পরিচয়ে ঢাকার এক ব্যক্তি কেশবপুর থানায় এসেছিলেন। বুল্টি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘স্বামী বিষ্ণু মন্ডলের সাথে ছাড়া কোথাও তিনি যাবেন না’।

তাকে যেন স্বামীর সাথে থাকতে দেয়ার জন্য আইনি সহায়তা দেয়া হয় সেজন্য বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থার সহায়তা চেয়েছেন শবনম ওরফে বুলটি।

তিনি বলেন, আমরা দুজন সারা জীবন একসাথে থাকতে চাই। আমাদের ভালোবাসার মৃত্যু হবে না। ধর্ম আমাদের কোনো বাধা নয়। সীমানা আইন আমাদের প্রেমে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারবে না।

এ বিষয়ে কেশবপুর থানার ভারপরাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে পাসপোর্ট আইনে শবনব পারভীন বুল্টির নামে মামলা দিয়ে বৃহস্পতিবার তাকে যশোর আদালতে পাঠানো হয়েছে।

মিলন রহমান/এফএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।