পাহারা দিতেই ব্যয় ১৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা
পাকশীস্থ নর্থবেঙ্গল পেপার মিল এখন মৃত শিল্প প্রতিষ্ঠান। বিগত জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর সময় এটি লোকসানের অজুহাতে বন্ধ করে দিয়ে ১৩১ জন কর্মকর্তা, ১১৩৮ জন শ্রমিক-কর্মচারি ও মিলকেন্দ্রিক হাজারো কর্মজীবী মানুষকে বেকার করে দেয়া হয়। বর্তমানে মিলটির মূল্যবান যন্ত্রপাতি চুরিসহ মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মিলসহ বিশাল এলাকা পাহারা দিতে প্রতি মাসে ব্যয় হচ্ছে ১২ লাখ টাকা। এই হিসেবে গত ১৩ বছরে এই খাতে ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার আইন উপ-বিভাগের কর্মকর্তা সাজেদুল আলমের কাছে মিল চালুর সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, নর্থবেঙ্গল পেপার মিলটি প্রাইভেটাইজেশন কমিশনে ন্যস্ত করা আছে। একবার এটি ব্যক্তি মালিকানায় বিক্রির সিদ্ধান্ত হলে দর নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হলে কিনতে আগ্রহি একটি পক্ষ কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করে রাখে। মামলাটি এখনো চলমান আছে। ফলে মিলটি নিয়ে কিছু করা যাচ্ছে না।
পাকিস্তান আমলে ১৯৬৪ সালের এপ্রিল মাসে প্রকল্প পরিকল্পনা অনুমোদন করেন তৎকালীন সরকার। এসময় প্রথম প্রজেক্ট ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এম ওয়াজির ইমাম। ১৯৬৫-৬৬ সালে ১৩৩ দশমিক ৭১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২৫ শে ফ্রেবুয়ারি ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সরকার ও দাতাদের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ৩ মার্চ ১৯৬৭ সালে মিলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৭০ সালের জুন মাসে। এটি নির্মাণে জার্মাান, ইতালি, ফ্রান্স আর্থিক সহায়তা দেয়।
দেশের বিভিন্ন চিনিকল থেকে প্রাপ্ত আখের ছোবড়া (ব্যাগাস) কাগজ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এই মিলটি কাগজ তৈরির ক্ষেত্রে একটি আধুনিক মিল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মিলে উৎপাদিত বিভিন্ন কাগজ গুণে ও মানে ভাল ছিল। দৈনিক ৬০ মেট্রিক টন হিসেবে বার্ষিক ১৫ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে ১৯৭০ সালের ২৫ জুলাই এই মিলের উৎপাদন শুরু হয়। তবে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায় ১৯৭০-৭১ সালে। পরীক্ষামূলকভাবে ২৬৫৭ মেঃটন কাগজ উৎপন্ন হয়।
সাদা লেখার কাগজ ছাড়াও বাদামি, মেনিফোল্ড, ব্লু ম্যাচ ইত্যাদি ধরনের কাগজ এই মিলে তৈরি হতো। মিলটি স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তা মেরামত করে ১৯৭৫ সালের মার্চ মাস থেকে পুনরায় উৎপাদন শুরু হয়। মিলের কর্মকর্তা ছিলেন ১৩১ জন, শ্রমিক-কর্মচারি ১১৩৮ জন। বৃহদাকার এই মিলটি ৩০/১১/২০০২ সালে লোকসানের অজুহাতে বন্ধ করে দেয়া হয়। অথচ লোকসানের প্রধান কারণ ছিল দুর্নীতি, মাথাভারি প্রশাসন ও বিক্রয় ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি।
বন্ধের পর থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, হিসাব কর্মকর্তা, একজন সহকারী ছাড়াও রয়েছেন ৫০ জন আনসার সদস্য ও মিলের নিজস্ব ২০ জন সিকিউরিটি গার্ড। সব মিলিয়ে ৭২ জন বন্ধ থাকা এই মিলটি পাহারা দিচ্ছেন। প্রতিমাসে তাদের বেতন ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ ব্যয় হচ্ছে ১২ লাখ টাকা। বন্ধের পর থেকে গত ১৩ বছরে সরকারের গচ্চা গেছে ১৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক টেলিকনফারেন্সে সরকার গঠন করলে পাকশী পেপার মিলটি চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
আলাউদ্দিন আহমেদ/এমজেড/এমএস