দিনাজপুরে কালো তালিকাভুক্ত হচ্ছে ১৮৯৪ চালকল মালিক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি দিনাজপুর
প্রকাশিত: ০৬:৩৭ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭
ফাইল ছবি

চাল সরবরাহে সরকারি খাদ্যগুদামের সঙ্গে চুক্তি না করায় জেলার ১ হাজার ৮৯৪ টি চালকল মালিককে কালো তালিকাভুক্ত করতে যাচ্ছে খাদ্য বিভাগ। চলতি বোরো চাল সংগ্রহ মৌসুমে সরকার নির্ধারিত ক্রয়মূল্যের চেয়ে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি হওয়ায় সরকার শাস্তিমূলক এ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। কালো তালিকাভুক্ত হলে এসব চালকল মালিক আমন মৌসুমসহ আগামী দুই বছর অর্থ্যাৎ চার মৌসুম সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করতে পারবেন না।

চুক্তিবিহীন চালকল মালিকদের প্রতি কড়া নজর এবং সরবরাহকৃত চালকল মালিকদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে বোনাস ব্যবস্থার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টির অপেক্ষায় আছে খাদ্য বিভাগ।

জেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় ২ হাজার ৪৯৪ টি চালকল রয়েছে। এর মধ্যে চলতি বোরো মৌসুমে ৬০০ জন চালকল-মালিক চাল সরবরাহের জন্য খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা চার ভাগের এক ভাগও অর্জিত হয়নি।

খাদ্য বিভাগ সূত্রে আরও জানা যায়, জেলায় বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৮৬ হাজার মেট্রিকটন। এ লক্ষ্যে ১ মে থেকে জেলার ২ হাজার ৪৯৪টি চালকল মালিককে সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করতে খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে চুক্তি করতে বলা হয়। চুক্তির শেষ সময় ছিল ২০ মে। এই সময়ের মধ্যে মাত্র ৬০০ জন চুক্তিবদ্ধ হন। পরে চুক্তির মেয়াদ ৩১ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বর্ধিত সময়ের মধ্যে আর কেউ চুক্তিবদ্ধ হননি। মোট ৬০০টি চালকল মালিক এ পর্যন্ত ৩৫ হাজার মেট্রিকটন চাল সরবরাহ করেছেন। সংগ্রহের শেষ সময় ৩১ আগস্ট হলেও ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।

সরকার চাল কেনার জন্য প্রতি কেজি সেদ্ধ চালের মূল্য ৩৪ টাকা এবং আতপ চালের মূল্য ৩৩ টাকা নির্ধারণ করেছে। অথচ খোলা বাজারে সর্বনিম্ন মানের চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকায়। চাল উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় চালের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। লোকসান গুনতে হবে ভেবে অধিকাংশ চালকল মালিক খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করতে চুক্তিবদ্ধ হননি। অনেক চালকল মালিক লাইসেন্স টিকিয়ে রাখতে লোকসানের কথা ভেবেই চাল সরবরাহ করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

চালকল মালিকরা মনে করছেন, একই বছরে দেশে দুইবার বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে। ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর সে জন্যই দফায় দফায় ধান-চালের দাম বেড়েই চলেছে।

বীরগঞ্জ উপজেলার মেসার্স উত্তরা চালকলের মালিক প্রমোদ রায় বলেন, সরকারিভাবে চালের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে বাজারে তার চেয়ে চালের দাম অনেক বেশি। তাই সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারিনি। সরকার মূল নির্ধারণ করেছে সেদ্ধ ৩৪ টাকা আর আতপ ৩৩ টাকা । অথচ বাজারে চালের দাম কেজিপ্রতি সর্বনিম্ন ৪০ টাকা। সরকার নির্ধারিত চালের দাম বাড়ানো হলে চুক্তিবদ্ধ হতাম। এছাড়া যারা চাল সরবরাহ করেছে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকার থেকে যে সুবিধা দেয়ার কথা ছিল তা এখনো দেয়া হয়নি।

দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, কোনো চালকল মালিক নিজের ক্ষতি করে খাদ্য গুদামে চাল দিতে চান না। আবার সরকার ধানের মূল্য নির্ধারণ করেছে ২৪ টাকা কেজি। ধানের মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করলে চালের কেজি হওয়ার কথা ছিল ৩৯ টাকা। কিন্তু সরকার চালের কেজি নির্ধারণ করেছে ৩৩ ও ৩৪ টাকা। তাই মিলাররা খাদ্য গুদামের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারেনি।

নির্ধারিত সময়ে চাল সরবরাহ না করা হলে মিলগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সারাদেশে এটা করা হচ্ছে। দিনাজপুরেও করা হবে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে এখনো চিঠি পায়নি। আর কালো তালিকাভুক্ত করা হলে আমাদের কিছু করার নেই। ব্যবসায়ীরা তো লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে চাল সরবরাহ করবে না।

দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এস এম কায়সার আলী জাগো নিউজকে বলেন, যেসব চালকল-মালিক চাল সরবরাহে চুক্তি করেননি তারা কালো তালিকাভুক্ত হতে পারেন। কালো তালিকাভুক্ত হলে, তারা আগামী দুই বছর (চার মৌসুম) কোনো চুক্তি করতে পারবেন না। আর যারা চুক্তি করেও চাল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হবেন, তারা এক বছর (দুই মৌসুম) চুক্তি করতে পারবেন না।

এমদাদুল হক মিলন/একে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।