জামালপুরে বন্যায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী
টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। গত ৫ দিন ধরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় দশ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। পানিবন্দী এসব মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে এনজিও থেকে নেয়া ঋণের বোঝা আর নৌ ডাকাতদের দৌরাত্ম্য।
এদিকে বন্যার পানিতে ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় কর্মহীন পানিবন্দী মানুষগুলোর দু’বেলা খাবার জোগাড় করাই যেখানে দূরুহ ব্যাপার সেখানে বিভিন্ন এনজিও চাপ দিচ্ছে ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য। পানিবন্দী কর্মহীন এসব মানুষেরা পরিবারের জন্য দু’মুঠো খাবারের যোগান দেওয়ার পাশাপাশি ঋণের টাকা জোগাড় করতে রীতি মতো হিমশিম খাচ্ছে।
কুলকান্দী ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামের সমিতা রানী জানান, গত বছরের বন্যায় ঘর নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ঘর মেরামতের জন্য উন্নয়ন সংঘ নামে এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণের টাকা পরিশোধ হবার আগেই আবারো বন্যা দেখা দেওয়ায় এখন তিনি মহাসংকটে পড়েছেন। পানিবন্দি অবস্থায় কাজকর্ম না থাকায় কিস্তির টাকা কিভাবে জোগাড় করবেন এখন সেটাই তার চিন্তা। তার কথা সমর্থন দিয়ে বিশাখা রানী জানান, বন্যার মধ্যে খাবার জোগাড় করতে না পারলেও কিস্তির টাকা ঠিকই জোগাড় করতে হয়। তানা হলে এনজিওর লোকেরা বসেই থাকে।
মাঝিপাড়া গ্রামে কিস্তির টাকা সংগ্রহ করতে আসা উন্নয়ন সংঘের কর্মী আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, বন্যা চলাকালীন কিস্তি সংগ্রহ করা যাবে না এমন নির্দেশনা অফিস থেকে জানানো হয়নি। তবে অফিস থেকে নির্দেশনা আসলে আমরা কিস্তি সংগ্রহ বন্ধ রাখবো।
অন্যদিকে বন্যা এলেই দুর্গত এলাকার মানুষদের মাঝে দেখা দেয় নৌ ডাকাতির আতঙ্ক। ভরা যমুনার বুকে স্বশস্ত্র নৌ ডাকাতরা বিশাল ট্রলারে এসে নদী তীরবর্তী মানুষদের গরু, ছাগল, ধান-চালসহ সর্বস্ব লুটে নিয়ে যায়। শনিবার গভীর রাতে ইসলামপুর উপজেলার পাথর্শী ইউনিয়নের শশারিয়াবাড়ি এলাকায় ডাকাতদল হানা দিয়ে কয়েকটি বাড়ি থেকে ১০টি গরু, ৫টি ছাগলসহ ধান-চাল লুট করে নিয়ে যায়।
শশারিয়াবাড়ি এলাকার আমির হোসেন জানান, শনিবার গভীর রাতে ১০/১২ জনের স্বশস্ত্র ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে তার বাড়ি থেকে ৬টি গরু ডাকাতি করে নিয়ে যায়। গরুর দুধ বিক্রি করেই তার সংসার চলতো। গরু ডাকাতি হয়ে যাওয়ায় এখন সংসার কিভাবে চালাবে সেটা নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক বন্যা দুর্গত এলাকা এবং ডাকাতির কবলে পড়া ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ নিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় ডাকাতির শিকার ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি পরিবারকে ৫ হাজার এবং একটি পরিবারকে ৭ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতি পূরণ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান বন্যা দুগতদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে জানিয়ে বলেন, নৌ ডাকাতি বন্ধে পুলিশি টহল বৃদ্ধি করা হচ্ছে এবং সেই সাথে বন্যা দুর্গত যেসব এলাকায় বিভিন্ন এনজিও কিস্তি সংগ্রহ করছে সেখানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত ঋণের কিস্তির টাকা সংগ্রহ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
শুভ্র মেহেদী/এসএস/এমএস