রাজশাহীতে চলছে পুকুর ভরাটের মহোৎসব


প্রকাশিত: ০৭:৪৯ এএম, ১৫ জুন ২০১৫

রাজশাহী পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত হলেও একটা সময়ে এ নগরীকে বলা হতো পুকুরের শহর। কিন্তু একের পর এক পুকুর ভরাট করে সেখানে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা, ভবন ও রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে তীব্র তাপদাহ ও খরার কারণে মহানগরীতে গৃহস্থালি কাজের জন্য পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে। পুকুরগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে নগরীর পরিবেশের উপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহীতে গত চার দশকে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় চার হাজার পুকুর ভরাট করা হয়েছে। রাজশাহীতে বিশেষ করে ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চলে পুকুর ভরাটের মহোৎসব। বর্তমানে রাজশাহী নগরীতে পুকুর রয়েছে মাত্র ২১৩টি। কিন্তু এখনও মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে রাতারাতি পুকুর ভরাট করে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে।



কিন্তু রহস্যজনক কারণে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। আর তাই কোন ধরনের নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করেই এখনো নগরীতে চলছে রাতারাতি পুকুর ভরাটের মহোৎসব। এভাবে চলতে থাকলে একদিকে যেমন নগরীর পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে, তেমনি অতিরিক্ত তাপ বৃদ্ধির কারণে গোটা মহানগরী বসবাসের একদম অনুপযোগী হয়ে উঠবে বলে মনে করেন সচেতন নাগরিকরা।
 
এই প্রেক্ষাপটেই রাজশাহী হেরিটেজ এর পক্ষে ২০১০ সালে মহানগরীতে অবৈধভাবে পুকুর ভরাট বন্ধের জন্য হাইকোর্টে রিট করা হয়। এরপরও নগরীতে বেশ কয়েকটি পুকুর ভরাট শুরু হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোরালো পদক্ষেপের কারণে হাতে গোনা দু’একটি পুকুর ভরাট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। রাজশাহীতে গত কয়েক বছর ধরে শহরের পুকুর নিয়ে গবেষণা ও তার ভরাট রোধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হেরিটেজ নামের এ প্রতিষ্ঠানটি।

বিষয়গুলো নিয়ে রাজশাহী হেরিটেজের সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, রাজশাহী শহরকে এক সময় পুকুরের শহর বলা হতো। কিন্তু সঠিক নজরদারির অভাবে শহরের একের পর এক পুকুর ভরাট করে দালান নির্মাণ করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এমন দিন আসবে যেদিন শহরে একটি পুকুরও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।



এ ব্যাপারে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিজাম-উল-আযিম জাগো নিউজকে জানান, তিনি রাসিকের দায়িত্ব নেয়ার পর শহরের প্রতিটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এতো বছরের সমস্যগুলো তো একদিনে সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে শহরের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় সব ধরনের কাজ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।

এদিকে, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)-এর চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ বজলুর রশিদ জাগো নিউজকে জানিয়েছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, বর্তমানে আরডিএতে দক্ষ লোকের অভাব ও লোকবল সমস্যার কারণে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলেও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে পারছেন না তারা। তাই এক শ্রেণির অসাধু চক্র এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের পুকুর ভরাট কার্যক্রম। শুরু তাই নয়, আইনগত কিছু জটিলতাকেও পুকুর ভরাট রোধে আরডিএ’র ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

এসএস/এমএসি/এসআরজে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।