৩ ছেলে পুলিশ, তবুও ভিক্ষা করেন মা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশাল
প্রকাশিত: ০৬:০৪ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের মৃত আইয়ুব আলী সরদারের সত্তরোর্ধ স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। তার ছয় সন্তানই প্রতিষ্ঠিত এবং তিন ছেলে পুলিশ বাহিনীতে। কিন্তু এ বয়সে যার আরাম-আয়েশে দিন কাটানোর কথা সেখানে দু'বেলা খাবার জোটাতে ভিক্ষা করতে হয় তাকে। একদিন ভিক্ষা না করলে খাবার জোটে না তার ভাগ্যে।

ছয় সন্তানের জননী মনোয়ারা বেগম। বড় ছেলে ফারুক হোসেন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), মেজ ছেলে মো. জসিম উদ্দিন পুলিশ সদস্য ও ছোট ছেলে নেছার উদ্দিনও পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই)। অন্য দুই ছেলে শাহাবউদ্দিন ব্যবসা এবং গিয়াস উদ্দিন ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। মনোয়ারা বেগমের একমাত্র মেয়ে মরিয়ম সুলতানা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।

স্থানীয়রা জানান, স্বামী বেঁচে থাকা অবস্থায় ছয় সন্তান নিয়ে ভালোভাবেই দিন কেটেছে আইয়ুব আলী সরদার ও মনোয়ারা দম্পতির। ২০১৪ সালে আইয়ুব আলী সরদার মারা যান। সংসারে টানাটানি থাকলেও ছয় সন্তানকে কমবেশি শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। তিন ছেলে পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করেন।

কিন্তু গর্ভধারিণী মাকে আজ দু’বেলা খাবারের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করতে হচ্ছে। বয়সের ভার আর অসুস্থতার কারণে ভিক্ষা করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে মনোয়ারা বেগমের জন্য। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ভিক্ষা করতে গিয়ে পা ফসকে পায়ের হাড় ভেঙে যায়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বাবুগঞ্জে স্টিল ব্রিজের পশ্চিম পাশের একটি খুপড়ি ঘরে বিনা চিকিৎসায় অর্ধাহারে বেঁচে আছেন তিনি।

বিষয়টি জানতে পেরে বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমের চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা পরিষদ সদস্য (৭ নম্বর ওয়ার্ড) ফারজানা বিনতে ওহাব।

সোমবার সকালে উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক শিহাব উদ্দিন মনোয়ারা বেগমকে দেখতে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মনোয়ারা বেগমকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলেন চিকিৎসক শিহাব উদ্দিন।

monoara

জেলা পরিষদ সদস্য (৭ নম্বর ওয়ার্ড) ফারজানা বিনতে ওহাব জাগো নিউজকে জানান, সন্তানরা এত খারাপ কীভাবে হতে পারে তার জানা ছিল না। বিষয়টি শুনে আজ সকালে মনোয়ারা বেগমের কাছে চিকিৎসক পাঠিয়েছেন। তার (মনোয়ারা বেগম) চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করবেন বলেও জানান ফারজানা বিনতে ওহাব।

এদিকে মনোয়ারা বেগমের ছেলে ইজিবাইক চালক গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমি সামান্য আয়ের মানুষ। টাকার অভাবে মা'র ভালো চিকিৎসা করাতে পারিনি। আমার তিন ভাই পুলিশ কর্মকর্তা। তারা তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অন্যত্র থাকেন। তাদের বলেছি মায়ের ভরণ-পোষণের জন্য। তারা মায়ের দিকে ফিরেও তাকায়নি। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছিল। তাতেও কোনো কাজ হয়নি।’

বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিপক কুমার রায় জাগো নিউজকে জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। মনোয়ারা বেগমকে দেখতে ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।

সাইফ আমীন/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।