চাঁদপুর থেকে ট্রেনে ইলিশ পরিবহনের দাবি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চাঁদপুর
প্রকাশিত: ০২:৩৯ এএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর থেকে ট্রেনে ইলিশসহ সকল পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত ৫ বছর যাবৎ এটা বন্ধ থাকলেও সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেনে কিছু ইলিশ পরিবহন করা হতো। কিন্তু ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সাগরিকা এক্সপ্রেস বেসরকারি খাতে যাওয়ার পর এখন ইলিশ পরিবহনও সম্পূর্ণ বন্ধ। যার ফলে ব্যবসায়ীদের অধিক অর্থ ব্যয় করে ট্রাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইলিশ পাঠাতে হচ্ছে। তাই সরকারের কাছে চাঁদপুর থেকে ট্রেনে ইলিশ পরিবহনে অতিরিক্ত বগি সংযোজনের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ইলিশের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁদপুর। সারা বিশ্বে চাঁদপুরের ইলিশের বেশ সুনাম রয়েছে। ইতোমধ্যে ইলিশ ব্র্যান্ডিং হিসেবে চাঁদপুরকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। চাঁদপুরসহ অন্যান্য জেলার জেলেদের ধরা ইলিশ চাঁদপুরের রফতানি কেন্দ্রে এসে স্তুপ হয়। পরে এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি বা সরবরাহ করা হয়।

আগে এখান থেকে ট্রেনে করে ইলিশ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেত। কিন্তু বর্তমানে বগি না থাকায় ট্রেনে আর ইলিশ রফতানি বা সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা অধিক ভাড়া দিয়ে ট্রাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইলিশ রফতানি করে আসছেন। এতে তাদের ব্যবসা তেমন একটা হচ্ছে না। এছাড়া সারাদেশে ইলিশের সুষম বণ্টন ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি মো. খালেক মাল জাগো নিউজকে বলেন, পূর্বে চাঁদপুর থেকে বিভিন্ন জায়গায় অনেক ট্রেন চলাচল করতো। ইলিশসহ মালামাল নেয়ার বগিও ছিল। বিশেষ করে সিলেটসহ বিভিন্ন মোকামে ইলিশ পাঠানোর জন্য বগি বরাদ্দ থাকতো। কিন্তু পাঁচ বছর যাবৎ ট্রেনে মাছ পরিবহনের কোনো বগি নেই। যার জন্য কোনো মাছ পাঠানো যাচ্ছে না। আমাদের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মালামাল পাঠাতে হচ্ছে। এতে আমরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সরকারের কাছে অন্তত চাঁদপুর-সিলেট রেলপথে একটি ট্রেন চালুর ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।

Chandpur

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস গাজী জাগো নিউজকে জানান, চাঁদপুর থেকে ইলিশ মাছ বিভিন্ন জেলায় রফতানির জন্য ট্রেনের বগি প্রয়োজন। কিন্তু কোনো বগি নেই। এ জন্য সরকার বহু টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বগি সংযোগ দিলে মাছ ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন জেলায় মাছ পৌঁছাতে পারত।

চাঁদপুরের মেসার্স শান্তি ফিসের পরিচালক হাজী আনোয়ার গাজী বলেন, চাঁদপুরে ইলিশ অনেক বেশি। কিন্তু চাঁদপুরে ট্রেন না থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ট্রাকে বিভিন্ন জায়গায় ইলিশ পাঠাতে হয়। যদি আগের মতো ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকতো তাহলে ট্রেনে বিভিন্ন জেলায় ইলিশ পাঠাতে সুবিধা হতো।

বাংলাদেশ রেলওয়ে লাকসামের টিআইটি আবু তাহের জাগো নিউজকে জানান, চাঁদপুর স্টেশন থেকে যে ক’টি ট্রেন চলাচল করছে, সেগুলো আন্তঃনগর মেঘনা, ডেম্যু এবং একমাত্র যাত্রীবাহী ট্রেন সাগরিকা এক্সপ্রেস। সাগরিকা ট্রেনটি ইতোমধ্যে প্রাইভেট কোম্পানি কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে। ওই ট্রেনে কোনো লাগিজ ভ্যান নেই, যার কারণে চাঁদপুর থেকে ভরা মৌসুমে বিক্রেতারা ইলিশ মাছ বুকিং করে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না।

বর্তমান অবস্থায় যদি বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ একটা যাত্রীবাহী গাড়ি এবং কমপক্ষে তিনটি লাগিজ ভ্যান সংযোজন করে, তাহলে সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ব্যবসায়ীরা ইলিশ পরিবহনের সুবিধা পাবে। রেলওয়ের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।

চাঁদপুর বড় স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার শোয়েব শিকদার জাগো নিউজকে জানান, বিষয়টি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করা হয়েছে। তারা আস্বস্ত করেছেন, ভবিষ্যতে ইঞ্জিন ও বগি সংকট নিরসন করে চাঁদপুর থেকে ইলিশ পরিবহনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ইকরাম চৌধুরী/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।