রোহিঙ্গা নিবন্ধনে সাড়া নেই, ৫ দিনে নিবন্ধিত ২৬০০

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৪:১৮ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারে চলমান জাতিগত সহিংসতায় প্রাণ রক্ষার্থে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা দিতে করা হচ্ছে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের এ উদ্যোগে সাড়া দিচ্ছেন না রোহিঙ্গারা। ফলে নির্ধারিত জায়গায় রেখে রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কেননা নিবন্ধন চলার বিষয়ে মেগাফোনে ভ্রাম্যমাণভাবে ঘোষণা দেয়া হলেও সেদিকে কোনো খেয়ালই করছেন না তারা। এসব কারণে নিবন্ধন শুরুর গত পাঁচদিনে মাত্র দুই হাজার ৬০০ জনকে নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। ত্রাণের আশায় উখিয়া-টেকনাফ সড়কের দুই পাশসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকায় রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে বা নিবন্ধনের আওতায় আনতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে দায়িত্বরতরা। আবার বিদ্যুৎ ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপকরণের অপ্রতুলতার করণেও বেগ পেতে হচ্ছে কর্মরতদের।

rohingya

শুক্রবারও উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পে পৃথক দুটি বুথে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কাজ চলে। আঙ্গুলর ছাপ, ছবি তোলা ও তথ্য সংরক্ষণ করতে একেকজন রোহিঙ্গার জন্য গড়ে তিন থেকে চার মিনিট সময় প্রয়োজন। ধীরগতির কারণেও নিবন্ধনে একটু সময় লাগছে।

শুত্রকার পর্যন্ত কুতুপালং ও নয়াপাড়ায় মাত্র দুই হাজার ৬০০ রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হয়েছে। লাখ লাখ রোহিঙ্গা নিবন্ধন করতে কতদিন লাগবে তা নির্দিষ্ট করে এখনই বলতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন।

আঙ্গুলের ছাপ দিচ্ছিলেন আরাফা আকতার নামে এক রোহিঙ্গা নারী। নিবন্ধন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাইকে সুবিধার ঘোষণা শুনে নিবন্ধন করতে এসেছি।

অনেকের মত তারও ধারণা, নিবন্ধন করলে সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে।

লাইনে দাঁড়ানো অনেকেই নিবন্ধন নিয়ে বিভ্রান্ত অবস্থায় রয়েছে। তাদের প্রশ্ন এসব করে কী হবে?
অনেকে বলছেন, সবার আগের আমাদের যেটা দরকার তা মাথা গোঁজার ঠাঁই, খাবার, নিরাপদ পানি ও পরিবেশ সম্মত টয়লেট। যেখানে বেঁচে থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানে নিবন্ধন করে কী হবে? এমনটিও প্রশ্ন অনেকের। এরপরও বুথের আশপাশে ঘুরছেন অনেক নারী-পুরুষ।

এদিকে স্থানীয় এএইচ সেলিম উল্লাহ ও শহিদুল ইসলাম জানান, নিবন্ধনের চেয়ে রোহিঙ্গারা খাবারের জন্য ছুটছেন বেশি। ক্ষুধার তাড়নায় সারাদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন ত্রাণবাহী গাড়ী জন্য। কাঙ্ক্ষিত গাড়ি আসলেই সেই গাড়ির দিকে নারী-শিশু ও পুরুষ সকলের দৌঁড়ঝাপ করছেন।

বয়োমেট্রিক নিবন্ধনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান বলেন, সিদ্ধান্ত অনুসারে সব ক্যাম্পে এক সাথে ২০টি বুথে নিবন্ধন কার্যক্রম চালানো কথা। কিন্তু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকায় টেকনাফ ও উখিয়ায় মাত্র ২টি বুথে নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। কুতুপালং রেজিস্টার্ড ও নয়াপাড়া রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পে চলছে বর্তমান কার্যক্রম। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় অন্যান্য ক্যাম্পগুলোতে কাজ চলানো সম্ভব হচ্ছে না। সেসব ক্যাম্প গুলোতে লজিস্টিক সার্পোট দেয়া গেলে পুরোদমে কাজ চলবে।

তিনি আরও জানান, শুক্রবার পর্যন্ত নয়াপাড়া ও কুতুপালং ক্যাম্পে মিলিয়ে ২৬০০ রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে।

rohingya

নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুর রহমান বলেন, আমরা আপাতত ১২ বছরের ওপরে বয়সী নারী-পুরুষকে নিবন্ধনের আওতায় আনছি। কারণ ১২ বছরের নিচের বয়সীদের আঙ্গুলের ছাপ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়। এদেরকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পাসপোর্ট অধিদফতর যৌথ উদ্যোগে নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে জানিয়েছেন কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ মুহাম্মদ রেজা।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত চার লাক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। কিন্তু স্থানীয়দের হিসেবে শিশুসহ মিলিয়ে এ সংখ্যা ৭ থেকে ৮ লাখ। পূর্বে বিভিন্ন সময়ে এসে জেলাসহ বিভাগগুলোতে ছড়িয়ে গেছে প্রায় ৪-৫ লাখ রোহিঙ্গা। এতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২-১৩ লাখ দাঁড়িয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।

এনজিও সংস্থা হেলপ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেমও এ তথ্যে সমর্থন দিয়ে বলেন, এখনই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে এরা পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের রোহিঙ্গা বিষয়ক কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) খালেদ মাহমুদ বলেন, যারা এখন ক্যাম্প এলাকায় আছে আগে তাদের নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা যাক। তারপর পুরো জেলা এবং বিভাগে রোহিঙ্গা শনাক্তকরণের উদ্যোগ নেয়া হবে। যেভাবে হোক সরকারের এ উদ্যোগ সফল করতে সংশ্লিষ্টরা শতভাগ আন্তরিক। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহলের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।