রাখাইনের শোয়াপ্রাং গ্রামে একদিনেই ৫ শতাধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৩:৩৭ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের শোয়াপ্রাং গ্রামে চরম নৃশংসতা চালিয়েছে সেদেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশ। অভিযানের প্রথম দিনেই তারা এ গ্রামের পাঁচ শতাধিক মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে, পুড়িয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। পুড়িয়ে দিয়েছে গ্রামের দুই শতাধিক বাড়িঘর। বাড়িঘরে আগুন লাগানোর পর পলায়নরত মানুষের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি চালিয়েছে। এমনকি নিহতদের জানাজা ও দাফন পর্যন্ত করতে দেয়নি বর্বর সেনাবাহিনী।

শোয়াপ্রাং গ্রাম থেকে কক্সবাজারের টেকনাফে পালিয়ে আসা কৃষক ইউনুচ, সৈয়দুল আমিন, শামসুল আলম, বশির আহমদসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে এমন নৃশংসতার বর্ণনা পাওয়া গেছে।

রাখাইনের রাচিডংয়ের শোয়াপ্রাং গ্রামের ইউনুচ জানান, মগ, সেনা ও বিজিপির যৌথ হামলায় চোখের সামনেই পরিবারের চারজন নিহত হয়। জলন্ত বাড়ির ভেতর পুড়ে মারা যায় মা মায়েনা খাতুন, গুলি করে হত্যা করা হয় ভাই আব্দুল জলিল, ভাতিজা সরোয়ার কামাল, রেজোয়ানসহ চারজনকে।

তিনি আরও জানান, কয়েকদিন আগে থেকে উত্তেজনা চলে আসছিল গ্রামে। আরসা নেতা মৌলভী আবুল হাশিমের নেতৃত্বে রোহিঙ্গা মুসলমানরা সংগঠিত হতে শুরু করেছিল গ্রামে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর গরু জবাই করে ভোজনের আয়োজন চলছিল। এ সময় খবর পেয়ে গ্রামে আসে তিনজন সেনা ও কয়েকজন বিজিপি সদস্য। গ্রামে লোকজনের জমায়েত দেখে সন্দেহ হয় তাদের।

গ্রামের এক বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পেয়ে যায় কিছু কিরিচ। এ সময় ক্ষেপে যায় সেনারা। জমায়েত হওয়া লোকদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে তারা। এতে মারা পড়ে কয়েকজন রোহিঙ্গা যুবক। উপায়ান্তর না দেখে রোহিঙ্গা যুবকরাও হামলার চেষ্টা করে সেনা ও পুলিশের ওপর। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে দুই শতাধিক সেনা ও পুলিশ গ্রামটি ঘিরে ফেলে নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। একের পর এক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।

ইউনুচ আরও জানান, তিনি একটি কচুরিপানা ভর্তি পুকুরে ডুবে থেকে জীবন বাঁচান। মাঝরাত পর্যন্ত চলে সেনা পুলিশের হত্যাযজ্ঞ। এ নৃশংসতায় একদিনেই আগুনে পুড়ে ও গুলিতে নিহত হয় পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা। বেঁচে যাওয়া লোকজন যে যেভাবে পারে পাহাড়ে-ঝোঁপ জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। সেখানে তারা তিনদিন অবস্থান করে। একপর্যায়ে নিহতদের জানাজা ও দাফন করতে গ্রামের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে সেনারা তাদের ওপর গুলি ছোড়ে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিহতদের গর্ত পুঁতে ফেলে আবার অনেককে কেটে আগুনে নিক্ষেপ করে তাদের ধ্বংসলীলা মুছে ফেলার চেষ্টা চালায়। এভাবে নির্বিচারে তারা গণহত্যা চালায় শোয়াপ্রাং গ্রামে। গ্রামের ২০৩টি বাড়িতে প্রায় ১২শতাধিক লোক ছিল। তার মধ্যে জীবিত খুঁজে পাওয়া যায় ৫ শতাধিক রোহিঙ্গাকে। বাকিদের পুড়িয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

হামলায় বেঁচে যাওয়া ইউনুচ স্ত্রী ও সন্তানদের খুঁজে নিয়ে পরবর্তীতে মংডু হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে চলে আসেন। প্রায় ১৬ দিন পর তারা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন।

আরএআর/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।