রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কথা নিজ দেশে জানাবেন কূটনীতিকরা
নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশের মানবিকতা খুবই প্রশংসনীয়। তবে ক্যাম্পে শরণার্থীদের মানবেতর জীবন পীড়াদায়ক। তাই তাদের নিজ দেশে (মিয়ানমার) ফেরত যেতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে নিজ নিজ দেশের সঙ্গে আলাপ করা হবে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসা বিভিন্নি দেশের কূটনীতিকরা।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তারা এ কথা জানান।
এর আধা ঘণ্টা আগে উখিয়ার কুতুপালংয়ে পৌঁছান বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদের বহন করা গাড়িটি। সেখানে পৌঁছে তারা কুতুপালং ক্যাম্পে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তারা।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এতদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি জেনেছেন কূটনীতিকরা। কিন্তু আজ (বুধবার) পরিদর্শনে এসে বাস্তবতা অনুধাবন করতে পেরেছেন তারা। পলিথিনের ঝুপড়িতে বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট কাদাময় পরিবেশে রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনযাপন সবাইকে ব্যথিত করেছে। তাই পরিদর্শনরত বিদেশি কূটনীতিকরা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যেতে নিজ নিজ দেশের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দুর্বিষহ জীবনাচার সম্পর্কে অবহিত করবেন বলে জানিয়েছেন।
বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৬৭ আসনের প্লেনে রওনা হয়ে বেলা সোয়া ১১টার দিকে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। সেখানে তাদের স্বাগত জানান কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন ও পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেখান থেকে গাড়িতে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় কুতুপালং ক্যাম্পে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের পুরো ক্যাম্প ঘুরিয়ে রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনযাপন সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক ক্ষতির বিষয়াদিও তাদের নজরে আনা হয়। নিপীড়িত মানবতার দিকে চেয়ে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ সহায়তা দিতে গেলে আমরা নিজেরাই নিষ্পেষিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনার কথাও তাদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক।
উল্লেখ্য, নিজ দেশে জাতিগত সহিংসতায় নিপীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী-শিশু ও পুরুষ। গত ২৪ আগস্ট আনান কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর দিবাগত রাতে আরাকান রাজ্যে পুলিশ পোস্টে হামলার অভিযোগে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে অভিযানের নামে সে দেশের সেনা-পুলিশ।
তারা নিরস্ত্র সাধারণ রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে আগুন দিয়ে ধ্বংসস্তূপ বানাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। ঘটনার পর থেকে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে এসে জড়ো হন আতঙ্কিত হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-শিশু-পুরুষ। তখন তাদের বাংলাদেশে ঢুকতে বাধা দেয়া হলেও ১ সেপ্টেম্বর রাত থেকে নতুন করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢোকা শুরু করে। গত ১২ দিনে ৪ লাখের অধিক নতুন রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে টেকনাফ-উখিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে।
বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ও তাদের ওপর ঘটে যাওয়া পাশবিকতা নিয়ে বিশ্ব মিডিয়া সংবাদ প্রচার করায় বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করে তাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ করছে। কিন্তু আশ্রয় দিয়ে সহযোগিতা দেয়ায় শেষ সমাধান না হওয়ায় তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে বিশ্ব জনমত গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। এ কারণে বাংলাদেশে অবস্থানরত ৪০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্রদূত, ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত বা প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের কয়েকটি সংস্থার প্রধানকে বুধবার রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবন যাত্রার চিত্র দেখাতে উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/জেআইএম