এক পদ্মায় সব হারালেন মোহাম্মদ আলী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:৩২ এএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

গত ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন মোহাম্মদ আলী মাদবরের স্ত্রী। বাবা হওয়ার অনন্দে চারদিনের নবজাতক, স্ত্রী ও শাশুড়িকে নিয়ে লঞ্চে বাড়ি ফিরছিলেন মোহাম্মদ আলী। কিন্তু শোকের সাগরে সব তলিয়ে গেল। বাড়ি আর ফেরা হলো না তাদের। পদ্মায় ৩ লঞ্চডুবির ঘটনায় এখনও নিখোঁজ মোহাম্মদ আলীর নবজাতক মেয়ে, স্ত্রী ও শাশুড়ি।

গত সোমবার ভোর পাঁচটার দিকে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় পদ্মা নদীর ওয়াপদা লঞ্চঘাটে স্রোতের তোড়ে বিআইডব্লিউটিসির পল্টুন বিচ্ছিন্ন হয়ে তিনটি লঞ্চ ডুবে যায়। এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ২২ জন। মৌচাক-২ নামের লঞ্চে করে ঢাকা থেকে ওয়াপদা লঞ্চঘাটে এসেছিলেন মোহাম্মদ আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা। মোহাম্মদ আলীর বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার লোনসিং গ্রামে।

জানা যায়, গত বুধবার ঢাকার একটি হাসপাতালে মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী পারভিন আক্তার সন্তান প্রসব করেন। রোববার রাতে তারা লঞ্চে করে নড়িয়ার উদ্দেশে রওনা হন। সোমবার ভোর ৪টার দিকে মৌচাক-২ লঞ্চটি ওয়াপদা ঘাটে পৌঁছায়। বাইরে অন্ধকার থাকায় তারা লঞ্চে অপেক্ষা করছিলেন। লঞ্চের অন্য যাত্রীরা নেমে গিয়েছিলেন।

ভোর ৫টার দিকে হঠাৎ নদীভাঙন ও তীব্র স্রোতে ঘাট থেকে পল্টুন বিছিন্ন হয়ে লঞ্চটি তলিয়ে যায়। মোহাম্মদ আলী কোনো রকমে সাঁতরে তীরে ওঠেন। তবে তলিয়ে যান তার নবজাতক মেয়েসহ স্ত্রী পারভীন (৩৫) ও শাশুড়ি ফকরুন্নেছা বেগম (৫০)।

পরে স্থানীয় লোকজন মোহাম্মদ আলীকে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। দুপুরের দিকে মোহাম্মদ আলীর মা সায়েরা বেগম তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সদর হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গতকাল মঙ্গলবার বাড়ি ফিরেছেন মোহাম্মদ আলী।

মোহাম্মদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, সেদিন ভোরে লঞ্চ ঘাটে আসার পর মেয়ে, স্ত্রী ও শাশুড়িকে নিয়ে নেমে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল আমার। আমার স্ত্রী পারভীনই দিনের আলোর জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিল। দিনের আলোয় মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল সে। কিন্তু তার সে ইচ্ছা আর পূরণ হলো না। এখনও মেয়েটির চেহারা আমার চোখে ভাসছে।

মো. ছগির হোসেন/এফএ/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।