খুলনায় সরকারি চাল সংগ্রহে ব্যাপক দুর্নীতি
চলতি মৌসুমে সরকারিভাবে ইরি-বোরো চাল সংগ্রহে খুলনার রাইস মিলগুলোকে বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনিয়মের মাধ্যমে খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ কয়েকজন কর্মকর্তা নিজেদের পকেট ভারী করে চলেছেন। দূর্নীতির মাধ্যমে চিড়ামিল, চানাচুর, সেমাই ও চিপস তৈরীর মিল এবং বন্ধ রাইস মিলের নামেও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বরাদ্দ বঞ্চিত রাইস মিল মালিকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, সরকারী বরাদ্দ ৩২ টাকা হলেও মিলারদের কাছ থেকে নিন্মমানের চাল নিয়ে ২৮ থেকে ২৯ টাকা দর দিচ্ছেন।
সূত্র জানায়, সরকারের চলতি ইরি-বোরো চাল সংগ্রহ মৌসুমে কেজি প্রতি ৩২ টাকা হারে ফুলতলা উপজেলায় এক হাজার ৮শ’ ৭ মেট্রিক টন নতুন চাল সংগ্রহের জন্য প্রকৃত মিলারদেরকে চুক্তির ঘোষণা দেয়া হয়। তবে সংশ্লিষ্ট মিলের লাইসেন্স, বিদ্যুৎ সংযোগ, ষ্টিপিংহাউজ, বয়লার, চাতাল এবং হলার থাকা আবশ্যক।
ঘোষণার প্রেক্ষিতে উপজেলার ২৫টি চাল মিল মালিক আবেদন করেন। আবেদন ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের তদন্তপূর্বক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শুভ অটো রাইস মিলকে ৩শ’ ৫২ মেট্রিক টন, মাহাবুব ব্রাদার্স ৪শ’, হক রাইস মিল ৪৫, তাজপুর রাইস মিল ৩৮, গাজী রাইস মিল ৪০, প্রগতি রাইস মিল ৯০, অগ্রনী রাইস মিল ৪৫, মোল্যা রাইস মিল ৪৫, সবুজ রাইস মিল ৯০, ভৈরব রাইস মিল ৩৮, তিন তারা রাইস-২কে ৪৫, জোনাব আলী রাইস মিল ৩৮, শায়লা রাইস মিল ৩০, ফুলতলা রাইস মিল ৪০, হারেজ আলী মহলদার রাইস মিল ৪৫, প্লাটিনাম রাইস মিল ৯৫, মধুমতি রাইস মিল ৫০, ফাতেমা রাইস মিল ৩০, জোবেদা রাইস মিল ৯০, শেখ রাইস মিল-১ কে ৯০, তিন তারা রাইস মিল-১ কে ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ এবং সে অনুযায়ী তারা চুক্তিবদ্ধ হয়।
অপরদিকে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারণে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বুলবুল রাইস মিল, হলার না থাকায় হোসেন রাইস মিল ও সরদার রাইস মিল এবং হলার না থাকা ও দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় সাহিদুর রহমান রাইস মিলকে বরাদ্দ্ দেয়া হয়নি বলে কর্তৃপক্ষ জানায়।
পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের তদবিরের কারণে সরদার রাইস মিলকে ২৬ এবং সাহিদুর রহমান রাইস মিলকে ২৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। যদিও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সেলিমুল আযম বলেন, যথাযথ নিয়ম মানায় তাদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এদিকে বরাদ্দ বঞ্চিত মিলারদের লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, বজলুর রহমানের মালিকানাধীন আলকা গ্রামস্থ শায়লা রাইস মিলে বক মার্কা আটা দিয়ে তৈরী হচ্ছে দৌলতপুর এলাকার গৌতম বাবুর ’সোনা চানাচুর’।
মো.শরীফ মোল্যার মালিকানাধীন ফাতেমা রাইস মিল এবং মো. আ. সালামের মালিকানাধীন গাজী রাইস মিল দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। এহসানুল হকের মালিকানাধীন তিন তারা রাইস মিল-১ এর চাতাল ভেঙ্গে আবাসিক প্লট হিসেবে বিক্রি হয়ে যাওয়ায় মিলটি বন্ধ রয়েছে।
রফিউদ্দিন মোল্যার মালিকানাধীন ফুলতলা রাইস মিলে মাসিক ১৮ হাজার টাকা ভাড়ার ভিত্তিতে তৈরী হচ্ছে চিড়া-মুড়ি। তবে খাদ্য নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তাদের পরিদর্শনকে সামনে রেখে সুচতুর মিল মালিকেরা চিড়া, চানাচুর, সেমাই ও চিপস্ তৈরী কয়েকদিনের জন্য বন্ধ রেখে এবং বন্ধ মিলসমূহে কয়েক বস্তা ধানের খামাল রেখে রাইস মিল চালু দেখানো হয়।
দাফতরিক পরিদর্শন শেষে মিলগুলো আবারো পূর্বের অবস্থানে ফিরে যায়। আবার দ্বিতীয় দফায় বরাদ্দ পাওয়া আ. হালিম সরদারের মালিকানাধীন সরদার রাইস মিলে ভাড়ার ভিত্তিতে গত দু’বছর ধরে তৈরী হচ্ছে সেমাই ও চিপস্।
ফুলতলা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাকির হোসেন বলেন, সারা বছর যাই তৈরী হোক না কেন সরকারের সাঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী মাত্র দু’সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট মিলগুলো তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী বরাদ্দকৃত চাল উৎপাদন সম্ভব।
মিলারদের অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নির্দেশে সহকারী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইফুল কাবির খান গত ২০ মে সরজমিনে চাল কলগুলো পরিদর্শন করেন। তার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ দিয়েছে।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সেলিমুল আযম অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কিছুটা সমস্যা থাকলেও মিলগুলোর অবকাঠামোগত দিক সঠিক ছিল। পরবর্তীতে যথাযথ নিয়ম মানায় তাদেরকে চুক্তিবদ্ধের আওতায় আনা হয়।
উল্লেখ্য, দেশব্যাপী গত ১ মে থেকে শুরু হয়েছে চাল সংগ্রহ, চলবে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত। বরাদ্দ পাওয়া এক হাজার ৮শ’ ৭ মেট্রিক টন চালের ইতোমধ্যে ৩শ’ ৮৯ দশমিক ৬৫০ মেট্রিক টন চাল ফুলতলা খাদ্যগুদামে সংগৃহীত হয়েছে।
আলমগীর হান্নান/এসকেডি/আরআই