পিরোজপুরে ব্রি-৬৪ ধানের বাম্পার ফলন
ধান গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত ধান বি-৬৮ পিরোজপুরের কয়েকটি জেলায় পরীক্ষামূলক চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। জিংক ধান করলে চাষ, পুষ্টি পাবে বারো মাস এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বে-সরকারি সংস্থা হারভেষ্ট প্লাস বাংলাদেশে এই প্রথম উফশী বোরো জাতীয় এই ধান উদ্ভাবন করে।
উদ্ভাবিত ধান পিরোজপুরের দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় ১৩ টি উপজেলায় প্রায় ৭’শ বিঘার জন্য চাষীদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়। ধান কাটা ও মাড়াই শেষে দেখা গেছে হেক্টর প্রতি উৎপাদন প্রায় ৫.৫ মে.টন উৎপাদিত হয়েছে।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ গাজীপুরের ধান গবেষনা ইনষ্টিটিউটের কর্মকর্তা ড. পার্থ সারথী বিশ্বাস এর নেতৃত্বে এক দল বিজ্ঞানী এই জিংক সমৃদ্ধ ধানটি উদ্ভাবন করেন।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবারই প্রথম চলতি বোরো মৌসুমে পরীক্ষামুলক ভাবে শুরু হয় এর আবাদ। প্রথম বারের মত উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রী-ধান ৬৪ চাষ করে কৃষকরা আশাতীত ফলন পেয়েছেন। দক্ষিনাঞ্চলের ৬টি জেলায় জিংক সমৃদ্ধ ব্রী ধান-৬৪’র বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
প্রায় সাড়ে ছয়’শ কৃষক এবারই প্রথম উচ্চ ফলনশীল জাতের এ ব্রী ধানটি চাষাবাদ করেন। এ অঞ্চলের কৃষকরা সাধারনত স্থানীয় জাতের ধান চাষাবাদ করে থাকেন। যার ফলন বিঘা প্রতি ১৮ থেকে ২০ মণের বেশি হয়না। কিন্তু এ বছর উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রী ধান-৬৪ চাষ করে কৃষকরা দ্বিগুন ফলন পেয়েছেন।
তাছাড়া এর ভাত খেতেও সুস্বাধু। তাই আগামীতে এ এলাকায় জিংক সমৃদ্ধ ব্রী ধান ৬৪’র চাষাবাদ ব্যাপক প্রসার লাভ করবে বলে কৃষি বিভাগের ধারনা।
উচ্চ ফলনশীল নতুন জাতের ব্রী ধান ৬৪’র জীবনকাল ধরা হয়েছে ১৪৫-১৫০ দিন। প্রতি কেজি ধানে জিংক বিদ্ধমান রয়েছে ২৪ মিলি গ্রাম। আর হেক্টর প্রতি এর উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয় সাড়ে ছয় থেকে ৭ টন। যা অন্যান্য ধানের চেয়ে উৎপাদন অনেক বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ায় কৃষি বিভাগ সহ সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থাগুলোও বেশ খুশি।
উদ্ভাবক ড. পার্থ সারথী জানান, ব্রি ধান-৬৪ তে জিংক এর পরিমান প্রতি কেজি চালে ২৫ মি. গ্রাম। ইতিপূর্বে উদ্ভাবিত কোন ধানই এতো পরিমান জিংক সমৃদ্ধ নয়।
তিনি আরো বলেন যে, অধিকাংশ শিশু ও কিশোরী জিংক এর অভাবে অপুষ্টি জনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। জিংক সমৃদ্ধ ব্রি ধান-৬৪ এর ভাত খেলে অপুষ্টি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। নব-উদ্ভাবিত এই ধানটি আগামী বোরো মৌসুমে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এর মাধ্যমে সারা দেশে কৃষকদের মাঝে পৌছে যাবে বলেও এই ব্রি-৬৪ এর ড. পার্থ সারথী জানান।
জিয়ানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অমিতাপ মন্ডল বলেন, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। কৃষিক্ষেত্রে উন্নতির জন্য সরকার নানামূখী পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। নতুন প্রযুক্তিতে উদ্ভাবিত ব্রী ধান মানব দেহের জিংকের অভাব পুরণ করবে। তাই উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ধান উদ্ভাবনের মাধ্যমে ফলন বাড়াতে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।
হারভেষ্ট প্লাস বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ম্যানেজার মো. খায়রুল বাসার জানান, নব উদ্ভাবিত এই জাতটি প্রচুর জিংক সমৃদ্ধ এবং ফলনও প্রচুর। এই প্রথম এই ব্রি-৬৪ চাষাবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত চাষীরা এর গুনাগুন এবং উচ্চ ফলনের কথা শুনে আগামী মৌসুমে এই ধান চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করছে।
স্বদেশ উন্নয়ন কেন্দ্র (সুক) পিরোজপুর জেলা সমন্বয়কারী সেলিম হওলাদার বলেন, নিয়ন্ত্রিত জিংক সেবনে সাধারণ রোগে আক্রান্ত শিশু নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও ম্যালেরিয়ার তীব্রতা হ্রাস পায়। তাই এই জিনিস গুলো মাথায় রেখে উদ্ভাবিত নতুন জাতের জিংক সমৃদ্ধ ব্রী ধান-৬৪ চাষাবাদের জন্য প্রান্তীক কৃষকরা আগামীতে আরো উৎসাহিত হবে বলে তিনি মনে করেন।
পিরোজপুরের পত্তাশী গ্রামের কৃষক এছাহাক তালুকদার ও নিয়াজ মাহমুদ জানান, চলতি মৌসুমে নব উদ্ভাবিত এই ব্রি-৬৪ জাতের ধানের ফলন চমৎকার হওয়ায় এ এলাকার কৃষকেরা আগামী বোরো মৌসুমে অধিক জমিতে এই ধানের চাষ করবে।
হাসান মামুন/এসকেডি/আরআইপি