বেড়েই চলছে চালের দাম
কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করছেন না কুষ্টিয়ার চাল ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে প্রশাসনের আল্টিমেটামও কোনো কাজে আসছে না। লাগামহীনভাবে কুষ্টিয়ায় বেড়েই চলছে চালের দাম। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার থেকে কুষ্টিয়ায় মিনিকেট চালের দাম আবারো কেজিপ্রতি দুই টাকা বেড়েছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অন্যান্য চালের দামও। অন্যান্য চালের দাম কেজিপ্রতি এক থেকে দেড় টাকা বেড়েছে।
দফায় দফায় চালের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতাসাধারণ পড়েছে বিপাকে। এর আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চালকল মালিকদের চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হলেও তাতে কোনো ফল হয়নি। উল্টো চালের দাম আবারো বাড়ানো হয়েছে।
সরেজমিনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মোকামে যে মিনিকেট চাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল সেই মিনিকেট চাল শুক্রবার থেকে দুই টাকা বেড়ে ৫৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আঠাশ, কাজল লতাসহ অন্যান্য চালের দামও কেজি প্রতি এক থেকে দেড় টাকা বেড়েছে।
শনিবার কুষ্টিয়া পৌর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মিনিকেট চাল কেউ কেউ ৫৭ টাকা আবার কেউ কেউ ৫৮ টাকায় বিক্রি করছেন। দামের এই হেরফেরের কারণ জানতে চাইলে জামিরুল নামের এক চাল ব্যবসায়ী জানান, যাদের কাছে আগের কেনা চাল আছে তারা ৫৭ টাকায় বিক্রি করতে পারছেন। আর যারা শুক্রবার এবং শনিবার মোকাম থেকে চাল কিনেছেন তারা ৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
চালের দাম আবারো বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে কুষ্টিয়া চালকল মালিক সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, মিল মালিকদের কিছুই করার নেই। কৃষকের ঘরে ধান নেই। দেশে চরম ধানের সঙ্কট চলছে। তাই ধান কেনার ক্ষেত্রে মিলাররা দাম দেখছে না। মিল চালু রাখার জন্য যে যা দাম বলছে মিলাররা সেই দাম দিয়েই ধান কিনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
তিনি বলেন, শুধু দেশে নয়, বাইরেও চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমদানি করা চালের দামও কেজিতে ২ টাকা বেড়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের চালের বাজারে।
বন্যার অজুহাত দেখিয়ে হঠাৎ করেই আগস্ট মাসের শেষের দিকে প্রথম দফায় মিনিকেটসহ সব ধরণের চালের দাম কেজি প্রতি তিন টাকা করে বাড়িয়ে দেন মিল মালিকরা। ওই সময় মিলাররা ঈদের পর দাম আরও বাড়বে বলে ইঙ্গিত দেন।
এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে চালের বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অভিযোগ এনে গত ৩০ আগস্ট সভা ডেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চালের দাম কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য মিল মালিকদের নির্দেশ দেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান। কিন্তু মিলালরা জেলা প্রশাসনের এই আল্টিমেটামের কোনো তোয়াক্কা না করেই দ্বিতীয় দফায় আবারো চালের দাম বাড়াল।
পৌর বাজারের চাল ব্যবসায়ী রঞ্জুর হোসেন নিশান অভিযোগ করেন, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে মিল মালিকরা যখন খুশি তখন ইচ্ছে মত চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
দ্বিতীয় দফায় চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাবিবুর রহমান বলেন, চালের বাজার স্বাভাবিক রাখতে মিল মালিকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। চালের দাম বাড়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে মিল মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। রোববার থেকে সকল মিলে অভিযান চালানো হবে বলেও জানান তিনি।
সম্প্রতি কুষ্টিয়ার চালের বাজার অস্থিরতার কারণ অনুসন্ধানে সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করে। অনুসন্ধানে জেলায় ৫০০ মিলের মধ্যে ৭০টি মিলে চালের অস্বাভাবিক মজুদের প্রামাণ মেলে। এর মধ্যে ৫০টি হাস্কিং এবং ২০টি অটোমেটিক রাইস মিলের নাম রয়েছে। এসব মিলে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি ধান মজুদ রয়েছে। যদিও সরকারি হিসেবের বাইরে মজুদের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ। তবে ওই তালিকা আরও ছোট করা হয়। যারা অতিমাত্রা চালের মজুদ করে বাজার অস্থির করছে তাদের তালিকা ছয়টিতে নামিয়ে আনা হয়। ওই তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে রশিদ এ্যাগ্রো ফুডের নাম। এর পরই রয়েছে বিশ্বাস এ্যাগ্রো ফুড, দাদা রাইস মিল, স্বর্ণা রাইস মিল, ব্যাপারী এবং থ্রিস্টার রাইস মিলের নাম।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী রশীদ এ্যাগ্রোতে চাল মজুদের পরিমাণ ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন, বিশ্বাস এ্যাগ্রো ফুডে রয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন, স্বর্ণা রাইস মিলে ১ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন, দাদা রাইস মিলে ১ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন, ব্যাপারী রাইস মিলে ১৬ হাজার মেট্রিক টন এবং থ্রিস্টার রাইস মিলে মজুদের পরিমাণ ১৯ হাজার মেট্রিক টন।
আল-মামুন সাগর/আরএআর/জেআইএম