প্রতীক্ষার অবসান হলো ১৫০ অভিবাসীর
দেশে ফিরিয়ে আনা ১৫০ অভিবাসীর স্বজনদের কাছে ফেরার প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। দেশে প্রবেশের দু`দিন পর আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বুধবার বিকেল থেকে তাদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফিরিয়ে আনাদের মাঝে প্রাপ্ত বয়সী ১২২ জন ঘরে ফিরছে নিজ জিম্মায়। আর ২৪ কিশোরকে আদালতের মাধ্যমে রেড ক্রিসেন্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সংস্থার সহায়তায় এসব কিশোর নিজ ঘরে ফিরবে।
তবে সাগরপাড়ি, বন্দী ও শরণার্থী জীবন একসঙ্গে পার করলেও অন্যদের সঙ্গে ঘরে ফেরা হচ্ছে না চার হতভাগার। দু`জন বিদেশি ও অপর দু`জন মামলার আসামি হিসেবে সনাক্ত হওয়ায় তাদের ভাগ্য থেকে বন্দী জীবনের কালো ছায়া কাটানো যায়নি। ওই চার জন পুলিশ হেফাজতেই থেকে গেছে।
বুধবার কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক বলেন, যাচাই-বাছাই শেষে ১২২ জনকে নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অপর ২৪ জন শিশু যাদের বয়স ১৯ বছরের নিচে। তাদের আদালতের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি`র কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সংস্থার সহায়তায় তারা ঘরে ফিরবে অথবা স্বজনরা এসে তাদের নিয়ে যেতে পারবেন।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ফিরিয়ে আনাদের মাঝে দু`জন বিদেশি নাগরিক ও দু`জন বিভিন্ন মামলার আসামি হিসেবে সনাক্ত হয়েছে। তাদের পুলিশ হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বিদেশি হিসেবে সনাক্ত দু`জনের মাঝে মোহাম্মদ হামিদ (৩২) মানবপাচারকারী দালাল বলে জানা গেছে। তারা কোনো দেশের তা স্পষ্ট করেনি জেলা প্রশাসক। তাদের দেশ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, তাদের ব্যাপারে আরো যাচাই-বাছাই চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ বলেন, ফিরিয়ে আনা ১৫০ জন দেশের ১৭ জেলার বাসিন্দা। পাচারের শিকার ব্যক্তিরা জেলা পর্যায়ে মানবপাচার আইনে মামলা করবে।
কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান আবুল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, ফিরিয়ে আনা ১৫০ জনের একজন চকরিয়ার বাসিন্দা একরাম হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মঙ্গলবার রাত ১টায় অজ্ঞাতনামা ২০ দালালকে আসামি করে কক্সবাজার সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা`র (আইওএম) ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার আসিফ মুনীর জাগো নিউজকে জানান, ১৫০ অভিবাসীর দেশে আসার বিষয়টি আন্তর্জাতিক ইস্যু হয়ে গেছে। তাই তাদের সঠিক গন্তব্য নিশ্চিত করতে প্রশাসন সুণিপূণ তদারক কার্য চালিয়েছে। এ কারণে দেশে আনার পরও স্বজনদের কাছে ফিরতে দু`দিন প্রতীক্ষা করতে হয়েছে এসব অভিবাসীদের।
তিনি আরো জানান, জীবন বৃত্তান্তসহ সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে বুধবার বেলা ২টার দিকে ১৮ এর নিচের বয়সী ২৪ কিশোরকে কক্সবাজার চীফ জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। সেখান থেকে তাদের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কাছে হস্তান্তর করা হয়। সংস্থার পক্ষে কক্সবাজারস্থ সহ-সভাপতি সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার, সাধারণ সম্পাদক আবুহেনা মোস্তফা কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নুরুল আবছার বলেন, ঠিকানা অনুযায়ী সকল কিশোরকে নিজ ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে সংস্থা। চাইলে কোনো স্বজন এসে তাদের গ্রহণ করে নিয়ে যেতে পারবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সায়ীদ আলমগীর/এআরএ/আরআইপি