নরকে রূপ নিয়েছে রোহিঙ্গা শিবির

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কক্সবাজার থেকে
প্রকাশিত: ০২:০৪ পিএম, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭
ছবি : মাহবুব আলম

চোখগুলো ছলছল। শেষ কবে ঘুমিয়েছিল, তা হয়তো অনেকেরই মনে নেই। যারা বসে আছেন, তাদের চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু। কিন্তু ঘুমানোর উপায় কই! বৃষ্টির কান্না এসে দুঃখ বাড়িয়েছে উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের মাঝে। দিনভর বৃষ্টি যেন ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গা পাড়ায়।

কাদা-বৃষ্টি সঙ্গে নিয়ে এক টুকরা পলিথিনে টঙ ঘর তুলে কেউ কেউ ঘুমানোর চেষ্টা করলেও, ক্ষুধা তাতে বাগড়া বাঁধিয়েছে। ক্ষুধার জ্বালা যে আর ওরা সইতে পারছে না, তা মলিন মুখগুলোই বলে দিচ্ছে। ঘুমের মতো মুখের হাসিও যে কবে উবে গেছে, তা জানা নেই রোহিঙ্গাদের।

rohingya

বলছিলাম রাষ্ট্রহীন, ভূমিহীন আরাকানের রোহিঙ্গাবাসীর দুঃখকথা। মিয়ানমার নামক রাষ্ট্রটিই তাদের রাষ্ট্রহীন করেছে। খোদ রাষ্ট্র, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে আর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে সীমানার এপারে।
কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ, বান্দরবানের নাইক্ষ্যাংছড়িজুড়ে এখন রোহিঙ্গা কান্না। রোহিঙ্গা কান্নায় অভিশপ্ত হচ্ছে বিশ্বসভ্যতা, দলিত হচ্ছে বিশ্বমানবতা। প্রাণ ভয়ে নিজ দেশ ছেড়ে ভিন দেশে ঠাঁই নিলেও একেক জন রোহিঙ্গার জীবন এখন একেকটি ‘দুঃখগাঁথা উপাখ্যান’।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসের বিখ্যাত সেই উক্তিটি ‘ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্র পল্লীতে’ যেন রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে শতভাগ পূর্ণতা পেয়েছে। ঈশ্বরের নাম করেই বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে আরাকানে রোহিঙ্গা নিধনে। আর রোহিঙ্গাদের ঈশ্বর যেন রয়েছেন দূরদেশে। রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্র নেই, সরকার নেই, সমাজ নেই। ঠিক যেন ঈশ্বরের করুণাও মিলছে না এ পাড়ায়। নইলে এত দুঃখ মেলে কি করে?

rohingya

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা এখন নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের এক জনপদ। উখিয়া বাজার থেকে কুতুপালং, কুতুপালং থেকে বালুখালি রাস্তার দু’ধারে লাখো রোহিঙ্গা ঠাঁই খুঁজছে। ঠাঁই বলতে চার কোণায় চারটি খুঁটিতে পলিথিনের ঘর। তাও মিলছে না অনেকের। সমস্ত জায়গা আগেই দখল হয়ে গেছে। সহায়-সম্বলহীন রোহিঙ্গারা এখনও স্রোতের মতো আসছেন। ঠাঁই না পেয়ে অনেকেই রাস্তার পাশে বসে-দাঁড়িয়ে প্রহর গুণছেন। প্রাণ ভয়ে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা সীমানার কাছে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানালেন পালিয়ে আসা মানুষেরা।

দিনের পর দিন পাহাড়ী পথ হেঁটে আর রাত জেগে জীবনের ঘানি আর টানতে পারছেন না রোহিঙ্গারা। তাই একটু খাবার, একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে মরিয়া। নারী, বৃদ্ধ আর শিশুরা এখানে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যে সহায়তা মিলছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। খাবার মিলছে না। চুলাও জ্বলছে না। গোসলের পানি তো দূরের কথা, খাবার পানিও মিলছে না নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের মাঝে। এমনকি প্রসাব-পায়খানার জায়গাও পাচ্ছেন না রোহিঙ্গারা।

rohingya

কথা হয় নাইক্ষ্যাংছড়ি উপজেলার তুমব্রু গ্রামে রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেয়া আরিফের সঙ্গে। বলেন, আরাকানের মুসলিমরা এখন নরকে বাস করছে। যাকে পাচ্ছে তাকেই হত্যা করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। আমার ঘরবাড়ি-দোকানপাট সব জ্বালিয়ে দিয়েছে মগ জনগোষ্ঠী আর সেনাবাহিনী মিলে। ঈদের তিন দিন আগে পালিয়ে এসেছি। এতটুকু ক্যাম্পে এখন ১২০০ মানুষ বাস করছি। নতুন যারা আসছেন, তারা ঠাঁই পাচ্ছেন না। ঠাঁই পেলেও ঘর বানানোর উপকরণ মিলছে না।

rohingya

তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, জীবন রক্ষার্থে বাংলাদেশ সরকার যে ভূমিকা রাখছে, তা কখনই ভোলার নয়। আমরা অবিলম্বে বিশ্ববাসীর সহায়তা চাইছি।

এএসএস/এএইচ/জেএইচ/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।