মানবতার ফেরিওয়ালা এসপি মিজান
চট্টগ্রামের পুলিশ কনস্টেবল শের আলী, কুমিল্লার কনস্টেবল মো. পারভেজ মিয়া আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমানের মতো কিছু পুলিশ সদস্যের করা ভালো কাজগুলো পাল্টে দিচ্ছে পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের নেতিবাচক সব ধারণা।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিবাদ দমনেও প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশ। ‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’- বাংলাদেশ পুলিশের এমন স্লোগানের মিল খুঁজে পাওয়া যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের কিছু কর্মকাণ্ডে।
অপরাধ দমনে শুধু গতানুগতিক পুলিশিং নয়, অসহায় মানুষের পাশে থেকে একের পর এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ।
অবশ্য পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার ঘটনায় কিছুটা সমালোচনাও হয়েছে জেলা পুলিশের।
তবে সরকারি শিশু পরিবারের ‘অনাথ’ হাবিবা আক্তারের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করে তার রাজকীয় বিয়ে দিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান।
তার এ উদ্যোগ নিজ বাহিনীতেও তাকে করেছে আলোচিত-প্রশংসিত। হাবিবার বিয়ের পর দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষ তাকে স্যালুট জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।
হাবিবার পর এসপি মিজানুর রহমান পাশে দাঁড়ান প্রতিবন্ধী শিশু মৌসুমির। দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যাওয়া ৯ বছরের শিশু মৌসুমিকে সুস্থ করার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন তিনি।
এরপর জেলা শহরের নয়নপুর গ্রামের দিনমজুর আলাউদ্দিনকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নেন তিনি। এমন মানবিক সব কর্মকাণ্ডের কারণে এখন অনেকেই এসপি মিজানুর রহমানকে উপাধি দিচ্ছেন ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ হিসেবে।
মানবতার এই ফেরিওয়ালা এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাবাসীকে নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন বন্যার্তদের। বন্যাদুর্গতদের জন্য মিজানুর রহমানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে গঠন করা হয় সাহায্য তহবিল। বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে মিজানুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকাসহ সর্বস্তরে মানুসের সহযোগিতায় বন্যার্তদের জন্য ৫০ লাখ টাকারও বেশি অর্থ সংগ্রহ করা হয়।
এছাড়া ১৫ লাখ টাকার ত্রাণসামগ্রী জমা পড়ে বন্যার্তদের সাহায্যের তহবিলে। এসব অর্থে কেনা ১০ হাজার প্যাকেট ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে গত মঙ্গলবার (০৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বন্যাকবলিত লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় রওনা হয় ১২টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান।
প্রতি প্যাকেটে পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি ডাল, আধা কেজি চিনি, আধা কেজি সুজি, আধা কেজি চিড়া ও দুটি খাবার স্যালাইন এবং বিশুদ্ধ পানি রয়েছে।
ত্রাণ বণ্টনের জন্য জেলা পুলিশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও সংগঠন কর্মীদের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দলও গেছে দুর্গত এলাকায়।
বন্যার্তদের জন্য এসপি মিজানুর রহমানের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
মঙ্গলবার বিকেলে জেলা পুলিশ লাইনের ড্রিলশেডে আয়োজিত ত্রাণসামগ্রীর শুভযাত্রা অনুষ্ঠানে আগত সব বিশিষ্টজ এসপি মিজানুর রহমানকে তার মহৎ উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন। অবশ্য নিজেকে মানবতার সেবায় নিয়োজিত রেখে আত্মতৃপ্ত হন এসপি মিজানুর রহমান।
এ ব্যাপারে এসপি মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর। সবাই এতে সাড়া দিয়েছে। স্কুলের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালা পর্যন্ত ত্রাণ সংগ্রহের বুথে সহায়তা নিয়ে এসেছেন। সবার স্বতঃস্ফূর্তায়ই অল্প সময়ে বন্যার্তদের জন্য এতো ত্রাণ সংগ্রহ করা গেছে বলেও উল্লেখ করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
আজিজুল সঞ্চয়/এএম/আইআই