বন্যায় কাউকে কষ্ট করতে দেব না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৩:০৭ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বন্যাদুর্গত মানুষের সবরকম সেবা নিশ্চিত করা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যা যা করা লাগে আমরা তা করছি। বন্যায় আমরা কাউকে কষ্ট করতে দেব না।

শনিবার বিকেলে বগুড়ার সারিয়াকান্দি ডিগ্রি কলেজ মাঠে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যাদুর্গত কোনো মানুষকে না খেয়ে থাকতে হবে না। যেসব কৃষক ও সাধারণ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন- যতদিন পর্যন্ত নতুন ফসল তাদের ঘরে না উঠছে ততদিন খাদ্যসহায়তা দেয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে বিনামূল্যে সার, কীটনাশক ও কৃষি উপকরণ দেয়া হবে। তারা যাতে পুনরায় কৃষিঋণ পান, বীজ ও বীজতলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে পারেন তার জন্য যা যা করা দরকার তাই করা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বন্যায় ও নদীভাঙনে যাদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে সরকারি উদ্যোগে তাদের ঘরবাড়ির ব্যবস্থা করা হবে। যাদের চাষের জমি গেছে তাদের জমির ব্যবস্থা করা হবে। বন্যার কারণে যেসব ছেলেমেয়ের বইখাতা নষ্ট হয়ে গেছে তাদের মাঝে পুনরায় যাতে বই বিতরণ করা যায় সেই ব্যবস্থা আমরা নেব। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও সংস্কার করা হবে।

চালের দাম কমিয়ে আনার জন্য চালের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানোর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। ৫০ লাখ পরিবারকে এর আওতায় আনা হবে। দুর্যোগের আগাম আভাসে আমরা ২৮ শতাংশ চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে ২ শতাংশ করেছি। ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল কিনেছি। সাধারণ মানুষ যেন ১০ টাকা করে ৩০ কেজি চাল কিনতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) সাহায্য অব্যাহত রাখব। ওষুধও দেয়া হবে। ত্রাণের কোনো অভাব হবে না।

বগুড়ায় বন্যা পরবর্তী সময়ে নদীভাঙন রোধে উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যমুনা, বাঙালি ও করতোয়া নদীর ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ৩টি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এছাড়া বগুড়া-সারিয়াকান্দি রাস্তা সম্প্রসারণ এবং সোনাতলায় বাঙালি নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা হবে। আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে চাই, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে মানুষের কর্মসংস্থান হয়।

jagonews24

দেশকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এভাবে পালন করতে চাই যে- দেশের কোনো মানুষ দুঃখী থাকবে না। তারা উন্নত জীবন পাবে। আর ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করবো এদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলে। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ।

সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাদারা মান্নানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, বগুড়া-১ আসনের সাংসদ আব্দুল মান্নান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজীত রায় নন্দী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মমতাজ উদ্দিন প্রমুখ।

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু।

শনিবার প্রধানমন্ত্রী সারিয়াকান্দির বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার পরিবারকে ত্রাণ সামগ্রী ও ২৫০ কৃষকের মাঝে ধানের চারা বিতরণ করেন। ত্রাণ বিতরণ শেষে সারিয়াকান্দি ডিগ্রি কলেজ হল রুমে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুধী সমাজ ও বন্যা ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাইবান্ধা থেকে হেলিকপ্টার যোগে দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে সারিয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পৌঁছান। সেখানে থেকে গাড়িতে করে সারিয়াকান্দি ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজিত সমাবেশস্থলে পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২০ বছর পর শনিবার যমুনাপাড়ের জনপদ সারিয়াকান্দি আসেন। এর আগে ১৯৯৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি সারিয়াকান্দি সফরে এসেছিলেন।

আরএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।