‘লাশটি ছিল খোকনের’


প্রকাশিত: ১২:০০ পিএম, ০৫ জুন ২০১৫

‘রাব্বি নয় লাশটি ছিল খোকনের। খোকনকেই ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করেছি। হত্যার পর পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য নিহত খোকনকে রাব্বি সাজিয়ে দাফন করি’। বৃহস্পতিবার নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে এমনই স্বীকারোক্তি দিয়েছে খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক চার যুবক।

গ্রেফতারকৃতরা হল-  মো. শরিফ আহম্মেদ ওরফে টেম্পু শরিফ (২৩), মো. শরিফ রহমান ওরফে সুন্দরী শরিফ (২৩), মো. সোহাগ (২৯), মো. রেজাউল করিম ওরফে রাজু (২৫)।

এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ২৮ মে নগরীর খুলশী থানাধীন গ্রিন ডেল্টা হাউজিং এলাকায় খুন করা হয় খোকনকে। আট দিন তদন্তের পর এ ঘটনার মোটিভ উদ্ধার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সিএমপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে খুনের ঘটনার তথ্য তুলে ধরেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার কুসুম দেওয়ান।  

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় গত ৩০ মে বিকেল সাড়ে চারটায় খুলশী থানাধীন লালখান বাজারস্থ পোড়া কলোনীর মুখে গ্রিন ডেল্টা হাউজিং এর নির্মানাধীন ভবনের কোণে অজ্ঞাতনামা এক পুরুষের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।  

সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। এরপর জনৈক হেলাল মন্ডল মর্গে গিয়ে অজ্ঞাতনামা লাশটি তার নিজের ছেলে রাব্বির (২১) বলে শনাক্ত করেন এবং নিজে বাদী হয়ে খুলশী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে লাশ বগুড়া নিজ বাড়িতে নিয়ে দাফন করেন।

এদিকে মামলা দায়ের করার পর থানা পুলিশের পাশাপাশি চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম ঘটনার মোটিভ উদঘাটনে কাজ শুরু করে।

মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার কুসুম দেওয়ান এর তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাতের নেতৃত্বে পুলিশ গোপন তথ্যের ভিত্তিতে লালখান বাজার এলাকা হতে রাজু নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে সদরঘাট শাহজাহান হোটেলের সামনে থেকে টেম্পু শরিফ, সুন্দরী শরিফ এবং সোহাগকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তাদেরকে গ্রেফতারের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। এসময় তারা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন যে ঘটনায় জড়িত ছিল। এছাড়া মৃত ব্যক্তিটি রাব্বি নয় তার নাম খোকন। রাজু, টেম্পু শরিফ, সুন্দরী শরিফ, সোহাগ, রাব্বি, আলী, বাবুল ড্রাইভার এবং খোকন পরস্পর বন্ধু ছিল।

তারা প্রতিদিন ডেল্টা বিল্ডিং আড্ডা দিত এবং নেশা করত। গত ২৮ মে সাড়ে এগারটার সময় আড্ডারত অবস্থায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খোকন এবং টেম্পু শরিফের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে খোকন তার হাতে থাকা ছুরি নিয়ে টেম্পু শরিফকে মারতে উদ্যত হয়। তখন সুন্দরী শরিফ একটি ইট দিয়ে খোকনের মাথার পিছন দিকে আঘাত করে। এসময় খোকন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যায়। এরপর অন্যরা একসাথে পাশে লুকিয়ে রাখা ছুরি নিয়ে খোকনের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত হলে লাশ টেনে এক কোণায় নিয়ে ব্যানার, বস্তা, ইট দিয়ে চাপা দিয়ে রাখে।

এ ঘটনার সাথে আরো বেশ কয়েকজন জড়িত বলে পুলিশ জানায়।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার কুসুম দেওয়ান জানান, প্রকৃতপক্ষে লাশটি কার তা নিশ্চিত করতে  আদালতের অনুমতি নিয়ে লাশের ডিএনএ পরীক্ষা করা  হবে। এ ছাড়া হেলাল মন্ডল লাশটি তার ছেলের বলে কি কারণে দাবি বা শনাক্ত করেছিলেন সে বিষয়েও অধিকতর তদন্ত করে দেখা হবে।  

এসএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।