বিয়ানীবাজারে দুই বোনকে বেঁধে ধর্ষণ, ৫ জনের যাবজ্জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ০৩:০৬ পিএম, ২০ আগস্ট ২০১৭

সিলেটের বিয়ানীবাজারে রাতের বেলা ঘরে ঢুকে কিশোরী দুই বোনকে বেঁধে গণধর্ষণ মামলার রায়ে ৫ ধর্ষণকারীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

আজ রোববার সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক এ. এম. জুলফিকার হায়াত এ রায় প্রদান করেন। 
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, বিয়ানীবাজার উপজেলার পূর্ব পইলগ্রাম প্রকাশ জালালপুরের মৃত মখদ্দস আলীর ছেলে জয়নুল আহমদ (৪০), একই গ্রামের কালাম আহমদ উরফে কামাল (২৬), সোনাই মিয়ার ছেলে আবদুল বাসিত (৩৬), একই থানার বরই আইল গ্রামের মো. আব্দুল মকিতের ছেলে হাসনু মিয়া (৩৭) ও কানাইঘাটের বড়দেশ গ্রামের মৃত সুন্দর আলীর ছেলে সেলিম উদ্দিন (২৫)।

এই পাঁচজনের মধ্যে আবদুল বাসিত বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। অন্যরা কারাবন্দি। এ মামলায় জয়নুলের ছোট ভাই ফখরুল ইসলাম উরফে মাতুফের (৩৮) বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় আদালত তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। 

আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মো. ফখরুল ইসলাম জানিয়েছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯(৩) ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ছাড়াও পাঁচজনকে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।

২০১৪ সালের ২৫ মে রাত প্রায় ৩টার দিকে আসামিরা সিঁধ কেটে ঘরের প্রবেশ করে ঘুমন্ত দুই বোনকে বেঁধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর পালিয়ে যাওয়ার সময় সৌর বিদ্যুতের আলোয় জয়নুলকে চেনেন ধর্ষিত দুই বোনের বাবা মো. ওয়াহিত আলী। পরদিন জয়নুলের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫ জনকে আসামি করে তিনি বিয়ানীবাজার থানায় একটি গণধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। পুলিশ জয়নুল ও তার ছোট ভাই ফখরুলকে গ্রেফতার করে সঙ্গীদেরও চিহ্নিত করে। পরে পর্যায়ক্রমে অভিযান চালিয়ে কালাম, হাসনু ও সেলিমকে গ্রেফতার করে। আদালতে ৪ জনই ধর্ষণের কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। 

তদন্ত শেষে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর আদালতে ৬ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট আদালতে অভিযোগ গঠন হয়। ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেন। 

ধর্ষিত দুই বোনের বাবা একজন চানাচুর বিক্রেতা। তিনি অভাবের মধ্যে মেয়ে দুজনকে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। বর্তমানে দুজন কলেজে পড়াশোনা করছেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন তিনি।

রায়ে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, আমি ঝালমুড়ি বিক্রি করি দুই পুরিরে (মেয়ে) পড়াইরাম। ই-ঘটনার পরও আমি তারারে পড়া থাকি বিরত রাখিনি। গ্রামের মানুষও আমারে সহায়তা করছইন। বিচার পাইছি, এখন চাই পলাতক আসামি যাতে ধরা পড়ে আর ই-রায় যাতে বহাল থেকে। আর কোনো চাওয়া নাই আমার।

বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন ইকবাল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, গরিব ঘরের স্কুলপড়ুয়া দুই মেয়ে গণধর্ষণের শিকার হওয়ায় অনেকের দুর্ভাবনা ছিল ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে। রায়ে সেই সংশয় দুর হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। এ রায় সমাজে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সহায়তা করবে।

ছামির মাহমুদ/এমএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।