বন্যায় শেরপুরে ৮০ গ্রাম প্লাবিত, ৪২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ
শেরপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের উজানে পানি কমতে থাকলেও দশানী ও মৃগী নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে শনিবার ভোর থেকে সদর উপজেলার বেতমারি-ঘুঘুরাকান্দি, বলাইয়ের চর এবং রৌহা ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে জেলার তিন উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের ৮০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ পাঠক (পানি পরিমাপক) মো. মোস্তফা মিয়া জানান, শনিবার দুপুর পর্যন্ত শেরপুর ফেরিঘাট পয়েন্টে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ২৪ ঘণ্টায় ৩ সেন্টিমিটার কমেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পিকন কুমার সাহা জানান, বন্যাকবলিত এলাকার পানিবন্দি লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ডুবে গেছে সদ্য রোপণ করা আমন, আধাপাকা আউশ, আমন বীজতলা ও শাক-সবজির আবাদ। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। সদর উপজেলার প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির ধান এবং ১২০ হেক্টর জমির সবজির আবাদ বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
বন্যাকবলিত বেশিরভাগ এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি লোকজনকে নৌকা ও কলার ভেলায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। বন্যার পানিতে শেরপুর-জামালপুর সড়ক তলিয়ে পোড়ার দোকান কজওয়ের উপর দিয়ে প্রায় ৫ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হওয়ায় গত চারদিন ধরে ওই সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
বলাইয়ের চর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার মো. নাসির উদ্দিন জানান, বন্যার পানি ফসলি জমি, বাড়িঘরে প্রবেশ করায় এলাকার শত শত কৃষক পরিবার তাদের ফসল হারিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। অনেকেই দাদন ও ব্যাংক-সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে এসব সবজি ও ফসলের আবাদ করেছিলেন। তারা এখন দারুণ দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন।
তিনি বলেন, আমার ওয়ার্ডে দশানি নদীর বাঁধ ভেঙে প্রায় ২৫ হেক্টর জমির শাক-সবজির আবাদ নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা একেবারে শেষ। বাড়িঘরে পানি ওঠায় কৃষকরা গরু-ছাগল নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে বন্যার কারণে চরাঞ্চলের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢোকায় সদর উপজেলার ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬টি উচ্চ বিদ্যালয়, ১০টি মাদরাসা এবং একটি কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সদর উপজেলার চরপক্ষিমারি ইউনিয়নের কুলুরচর-বেপারিপাড়া এলাকার প্রায় ৫ হাজার বানভাসি মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। বন্যার পানির তোড়ে ওই এলাকার অন্তত দুই শতাধিক ঘর ব্রহ্মপুত্র নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. শরিফ মিয়া জানান, প্রতি বছরই ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে কুলুরচর-বেপারীপাড়া এলাকার মানুষের বসতভিটা নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। নদী ভাঙনের কবল থেকে তাদের রক্ষায় তিনি স্থায়ী পদক্ষেপ দাবি করেছেন।
শেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য হুইপ আতিউর রহমান আতিক বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে কুলুরচর-বেপারিপাড়া এলাকায় একটি স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন।
এদিকে শেরপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ছানুয়ার হোসেন ছানু, ইউএনও মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বায়েজিদ হাসান ও শামীম আরা শনিবার বিকেলে কামারের চর, চরশেরপুর ও চরমুচারিয়া ইউনিয়নের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। তারা এ সময় তিন শতাধিক বন্যার্ত পরিবারের মাঝে পাঁচ কেজি করে চাল, এক কেজি করে ডাল, পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি ও খাবার স্যালাইন বিতরন করেন।
হাকিম বাবুল/আরএআর/আরআইপি