মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৩:১৭ পিএম, ১৭ আগস্ট ২০১৭

মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গাদের মাঝে ফের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত বছরের অক্টোবরের ‘অপারেশন ক্লিন’র পর সংগঠিত নিপীড়নের ‘রেশ’ না কাটতেই সম্প্রতি আবারও অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন ও ধরপাকড় শুরু হওয়ায় আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বলে জানা গেছে।

মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা থেকে মুসলমানদের বিতাড়িত করার দাবিতে রাখাইনদের আন্দোলনের মুখে আরাকানে সেনা নামিয়েছে সরকার এমনটি দাবি আতঙ্কিত রোহিঙ্গাদের।

এদিকে, আরাকান রাজ্যে অতিরিক্ত সেনা সমাবেশ ঘটানোর তথ্য পেয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে টহল জোরদার ও নজরদারি বাড়িয়েছে বিজিবি। কিন্তু এরপরও আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে।

তবে গত বছরের মতো করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবারও অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) লে. কর্নেল আনোয়ারুল আজিম।

গত সোমবার ভোরে সীমান্ত পেরিয়ে বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তিতে আসা আরাকানের বুচিদং এলাকার বাসিন্দা নাছির আহমদ (৫৫) জানান, গত ৪-৫ দিন ধরে আরাকানের (বর্তমান নাম রাখাইন রাজ্য) মুসলমান অধ্যুষিত রাচিদং, বুচিদং ও কইমালী এলাকায় সেনা সমাবেশ বাড়ানো হয়েছে। একেকদিন একে গ্রাম ঘিরে মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা খুঁজে খুঁজে যুবকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তার ছেলে জোবাইর আহমদকে (২০) ধরে নিয়ে গেছে সেনারা। তাই পরিবারের অন্যদের নিয়ে রাতের আঁধারে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছেন তিনি।

তিনি আরও জানান, অক্টোবরের মতো সেনাদের সঙ্গে রাখাইন যুবক ও ভান্তেরাও যোগ দিচ্ছে। গত কয়েকদিনে গত অক্টোবরের আতঙ্কে অন্তত কয়েকশ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মো. ইসমাইল জানান, খবর পেয়েছি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সেনা-পুলিশ ও রাখাইনরা একসঙ্গে অভিযান চালাচ্ছে। কুলি (শ্রমিক) খাটানোর কথা বলে যুবকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। যারা যেতে চাচ্ছে না তাদের পরিবারের ছোট শিশুদের নির্যাতন করা হচ্ছে।

গত কয়েকদিনে উখিয়ার বালুখালী নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪-৫টি পরিবারে ২৫-৩০ জন এসেছে মিয়ানমার থেকে। সেই সঙ্গে কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছেন অর্ধশতাধিক নতুন রোহিঙ্গা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মো. ইসমাইল বলেন, নতুন কেউ ক্যাম্পে আসলে অন্তত আমাদের কাছে খবর আসে। বৃহস্পতিবার কেউ এসেছে বলে এখনও খবর পাওয়া যায়নি। আমরাও পরিস্থিতির বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।

বিজিবি কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) লে. কর্নেল আনোয়ারুল আজিম বলেন, নিয়মানুসারে সীমান্ত টহল প্রতিনিয়ত চলে। তবে গত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তে আরাকানে অতিরিক্ত সেনা সমাবেশ করার খবর পেয়ে বাংলাদেশের জল ও স্থল সীমান্তে বিজিবির নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যেকোনো সময় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিহত করতে প্রস্তুত থাকে বিজিবি।

কিন্তু এতবড় সীমান্তে একেবারে শতভাগ নজরদারি করা সম্ভব হয় না। তাই হয়তো আতঙ্কিত কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে পারে। তবে তা গত বছরের অক্টোবরের ঘটনার মতো নয়।

তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা বা যেকোনো দেশের অপরাধী অনুপ্রবেশসহ অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে বিজিবির নিরবচ্ছিন্ন টহল ও নজরদারি রাখছে। এ নিয়ে আপাতত আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা খবর নিয়ে জেনেছি, অপরাধীদের ধরতে তারা সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা তাদের টার্গেট নয়।

এদিকে, বিশ্ব মিডিয়াগুলো মিয়ানমার থেকে গত কয়েকদিনে অন্তত ৫০০ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে এসেছে বলে সংবাদ প্রচার করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনার নিপীড়নের কারণে অনেকেই বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন। জাতিসংঘের আশঙ্কা মিয়ানমার সরকার ‘এথনিক ক্লিনজিং’ করতে পারে।

তথ্য মতে, কক্সবাজারে শরণার্থী শিবির ও পাশের এলাকায় প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। গত অক্টোবরের ঘটনার পর আরও প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে।

কক্সবাজারে কাজ করা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা দায়িত্বরতরা জানায়, তারা নতুন রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে খবর নিচ্ছেন। অক্টোবরের ফ্লো হয়ে তারা আসছে না।

সায়ীদ আলমগীর/এএম/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।