হাইকোর্টের দিকে তাকিয়ে ১৪ হাজার সিএইচসিপি
অবশেষে আশার আলো দেখতে যাচ্ছেন দেশের প্রত্যন্তাঞ্চলে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি)। দীর্ঘ অর্ধযুগ ধরে পালনকরা দায়িত্ব রাজস্বখাতে কেন নেয়া হবে না এটি জানতে চেয়ে উচ্চ আদালতের জারি করা রুলের প্রেক্ষিতেই এমনটি আশা করছেন তারা। তবে স্থাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর বা সংশ্লিষ্টরা জবাবে কী বলেন এটির উপরই নির্ভর করছে দেশের ১৪ হাজার সিএইচসিপির পরবর্তী ভাগ্য। কর্মটি রাজস্ব খাতে যাবার কোনো ইঙ্গিত বা সম্ভাবনা না দেখলে অনেকেই চাকরি ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে পারেন বলে মন্তব্য করেন সিএইচসিপিরা।
সূত্র জানায়, দেশের তৃণমূল জনগোষ্ঠীর দোর গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে নিভৃত গ্রামাঞ্চলে গড়ে তোলা হয় প্রায় চৌদ্দ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক। এসব ক্লিনিকে কাজ করছেন একজন করে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। যারা প্রসূতিসহ গুরুতত্বপূর্ণ সেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এখানে কর্মরত প্রশিক্ষিত সিএইচসিপিরা সরকারের গৃহীত রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে অন্যতম হাতিয়ার।
২০০০ সালে শেখ হাসিনা দেশের প্রথম কমিউনিটি ক্লিনিক গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতির গিমাডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করেন। এর পরের বছর সরকার পরিবর্তনের পর তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে রিভাইটালাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক পুনরায় চালু করে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। রামুতে উপজেলায় রয়েছে ২৩টি আর পুরো জেলায় সেবা দিচ্ছে ১৭৪ ক্লিনিক।
রামু উপজেলা সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ২০১৩ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ মডেল বড়বিল কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি এসএম রেজাউল করিম জানান, দীর্ঘ অর্ধযুগ আমরা মা-শিশু, নবজাতক, গর্ভবতীসহ সকল রোগীকে প্রথামিক চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। রোগী সুস্থ হলেও মানসিকভাবে ভালো নেই প্রায় চৌদ্দ হাজার সিএইচসিপি। কারণ তারা নিয়মিত বেতন-ভাতা পান না। এখানে কর্মরতদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষে রাজস্বখাতে স্থানান্তরের আশা দেখালেও তা এখনো হয়নি।
প্রকল্পের মেয়াদ শেষে জুন-২০১৫ হতে অপারেশন প্ল্যানভুক্ত ক্লিনিকের কার্যক্রম চালু রাখা হয়। কিন্তু বেতন-ভাতা কানাকড়িও বাড়ানো হয়নি। স্থায়ী কোনো আশা না দেখে অনেক প্রশিক্ষিত কর্মী অন্য পেশোয় চলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকের চাকরির বয়সও চলে যাওয়ায় রাজস্বের আশায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সিএইচসিপিদের অনেকে। তাতেও কোনো সুরাহা আসেনি।
গ্রেড-১৪ তে ইনক্রিমেন্ট বিহীন ছয় বছর ও আবার ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের জন্য ওপি পাস করানো হয়েছে। কিন্তু বেতন-ভাতা আগের হিসাবে। তাই গত ১২ এপ্রিল কক্সবাজারের রামুর ২৫ জনের চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তর আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হয় (যার নং-৫৫৩০/২০১৭ইং)।
গত ৭ আগস্ট রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে ২৫ জন কেন রাজস্বখাতে স্থানান্তর করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এরপর থেকে চার সপ্তাহ কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে স্বাস্থ্য সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, প্রকল্প পরিচালকসহ মোট সাতজনকে আদেশ দেন বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাশের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাসুদ আক্তার।
সিএইচসিপিদের ধারণা এ রুলের জবাবের মধ্যদিয়ে একটি আশান্বিত ঘোষণা আসতে পারে। এতে ভাগ্য খূলতে পারে ১৪ হাজার প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর। এর ব্যতয় হলে, নিশ্চিত জীবনের আশায় অনেকে অন্য পেশায় চলে গেলে সরকার হারাবে প্রশিক্ষিত জনবল। কিন্তু তারা চান লব্ধ প্রশিক্ষণ প্রত্যাঞ্চলের সাধারণ মানুষের সেবায় লাগিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে। তাই বিষয়টি বিবেচনায় নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যানবিদ রাসেল মোস্তফা জানান, ২০১৬ সালে সাধারণ রোগী, মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশু স্বাস্থ্য এই তিন ক্যাটাগরিতে জেলার ১৭৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে মোট ১২ লাখ তেইশ হাজার পাঁচশ চারজন রোগী সেবা নেন। আর ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন ক্যাটাগরিতে সেবা নিয়েছেন এক লাখ ছত্রিশ হাজার একশ সাতাত্তর জন।
কিন্তু সেবা অব্যাহত রাখলেও সুযোগ-সুবিধা ও চাকরি রাজস্বকরণের কোনো উদ্যোগ না দেখে রামু উপজেলায় ২ জন, মহেশখালীতে ৩ জন এবং সদর উপজেলায় ১ জন সিএইচসিপি এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। এসব সিএইচসিপিরা স্বাস্থ্য বিভাগের সকল বিষয়ে প্রশিক্ষিত জনবল।
সায়ীদ আলমগীর/এফএ/এমএস