চেয়ারম্যান-মেম্বার মিলে কেটে নিল সরকারি গাছ
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের বিরুদ্ধে সামাজিক বনায়নের প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারি গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানেও মিলেছে অভিযোগের সত্যতা। আর সামাজিক গাছ কেটে নেয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে বন বিভাগের আইনি ব্যবস্থা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর আঞ্চলিক বন মামলা পরিচালক মো. আবু জাফর। এ ঘটনা ঢাকতে চেয়ারম্যান-মেম্বার আর গাছ ব্যাপারী করছে লুকোচুরি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামাজিক বনায়নের কর্মসূচি হিসেবে ১৯৭৫ সালে উপজেলার দোলন বাজার-জাঙ্গালীয়া ও চান্দেরবাগ-নারগানা সড়ক এলাকার দুই পাশে তৎকালীন স্থানীয় সাংসদ, বর্তমান মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপির বাবা, ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদ কিছু গাছের চারা রোপন করেন।
এরই অংশ হিসেবে পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে ওই এলাকায় আরও কিছু গাছের চারা রোপন করেন সে সময়কার সাংসদ আখতারউজ্জমান। আর সামাজিক বনায়নের প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারি গাছ কেটে নেন জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান খান ফারুক মাস্টার এবং ওই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মেম্বার ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম নুরী।
এদিকে, জামালপুর ইউনিয়নের জামালপুর-জাঙ্গালীয়া ও চান্দেরবাগ-নারগানা সড়ক এলাকার দুই পাশের শিশু, মেহগনি, আকাশি ও নিমসহ বিভিন্ন প্রজাতের প্রায় অর্ধশতাধিক গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে অনুসন্ধান চালানো হয়।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ঘটনার সত্যতা। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান ওই ইউনিয়নের চান্দেরবাগ এলাকার মো. নাছির উদ্দিন মালিকানাধীন জান্নাতুল ফেরদৌস সমিলে বেশ কিছু সরকারি গাছ পান। পরে সমিলের মালিক না থাকার কারণে কর্মচারীকে ওই গাছ সেখান থেকে কোথাও না সরানোর নির্দেশ দেন ইউএনও।
কিন্তু চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সামাজিক বনায়নের সরকারি সে গাছ কিনে নেয়া হাবু নামের স্থানীয় এক ব্যাপারী ইউএনও’র নির্দেশ উপেক্ষা করে তা সমিল মালিকের অনুপস্থিতিতে অন্যত্র সরিয়ে নেয়।
এ ব্যাপারে জান্নাতুল ফেরদৌস সমিলের মালিক মো. নাছির উদ্দিন জানান, তিনি হজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হাবু ব্যাপারী তার সমিলে ওই গাছগুলো কাটার জন্য নিয়ে আসে। কিন্তু সরকারি গাছ হওয়ায় তিনি সে গাছ কাটেননি। কিন্তু শনিবার তার অনুপস্থিতিতে বৃষ্টির মধ্যে পিকআপভ্যানে করে সে গাছ সরিয়ে নেন।
কোথা থেকে আনা হয়েছে এ গাছ এমন এক প্রশ্নের জবাবে নাছির জানান, গাছগুলো চান্দেরবাগ এলাকার রাস্তার পাশের। তবে তিনি লোকমুখে শুনেছেন হাবু ব্যাপারী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক মাস্টারের কাছ থেকে কিনেছেন।
হাবু ব্যাপারীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও তা বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. নুরুল ইসলাম নুরীকে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে না পেয়ে ফোন দিলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, এসে জেনে জান। পরে প্রতিবেদক ঘটনাস্থলেই আছেন বললে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান খান ফারুক মাস্টার জানান, দোলান বাজার-জাঙ্গালীয়া সড়কে নুরুল ইসলাম মেম্বার একটি ঘরের ওপর ঝরে পড়ে যাওয়া দুইটি গাছ কেটেছেন লাকড়ির জন্য। পরে তিনি শুনতে পান কাপাইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ৪টি গাছ কে বা কারা কেটে নিয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, ওই গাছগুলো বিদ্যুতের লাইনের নিচ দিয়ে যাওয়ার ফলে বিদ্যুৎ অফিসের লোকেরা দুর্ঘটনা এড়াতে প্রায় অর্ধেক কেটে রেখেছিল। এ ব্যাপারে লোকজন লাগানো হয়েছে কিন্তু কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান সমিলে গাছ দেখার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অভিযুক্তদের খবর দিয়ে তার অফিসে আনা হয়েছিল। তারা ঝরে পড়ে যাওয়া ৪-৫টি শুকনা গাছ লাকড়ির জন্য কেটেছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। পরে তিনি বিষয়টি স্থানীয় বন বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন।
গাজীপুর আঞ্চলিক বন মামলা পরিচালক মো. আবু জাফর বলেন, বিষয়টি তাকে ইউএনও অবহিত করেছেন। এছাড়া গাছ কাটার বিষয়টি তিনিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানেন। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সামাজিক বিধি মালার আওতায় মামলা করা হবে।
আব্দুর রহমান আরমান/এএম/আরআইপি