প্রতি সেকেন্ডে ছাড়া হচ্ছে ৩৮ হাজার কিউসেক পানি
গত কয়েক দিনের অতি বর্ষণে রাঙ্গামাটির নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাঙ্গামাটি পর্যটন কর্পোরশেনের ঝুলন্ত সেতু। আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত পৌর এলাকাসহ বাঘাইছড়ি উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল।
সেই সঙ্গে তলিয়েছে সদর, লংগদু, বরকল, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর, বিলাইছড়ি ও কাপ্তাই উপজেলার নিম্নাঞ্চল। অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে কাপ্তাই হ্রদে পানি। হ্রদে অতিরিক্ত পানির চাপ কমাতে কাপ্তাই বাঁধের স্প্রিলওয়ের ১৬ গেট খুলে প্রতি সেকেন্ডে ছাড়া হচ্ছে ৩৮ হাজার কিউসেক পানি। জেলা প্রশাসন ও সশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যাকবলিত বাড়িঘরের লোকজনকে এরই মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। দুর্গতদের সহায়তায় শুকনা খাবার বিতরণসহ জরুরি ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অতি বর্ষণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত হারে বেড়েছে কাপ্তাই হ্রদের পানি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান জানান, কাপ্তাই হ্রদের তলদেশ ভরাট হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিপাতে হ্রদে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। প্রতি বছর বর্ষায় এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিং করা না হলে এ পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে না।
তিনি জানান, অতি বর্ষণে নামা পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়িসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদে অতিরিক্ত পানির চাপ কমাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খবর পাওয়ার পর পরই বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সেখানে দুর্গতদের জন্য শুকনা খাবারসহ জরুরি খাদ্য সহায়তায় ১৫ মেট্রিক টন চাল পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।
কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবদুর রহমান জানান, বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা ১০৭ দশমিক ৭৮ ফুট। রুলকার্ভ অনুযায়ী চলতি মাসে হ্রদে পানির লেভেল থাকার কথা ৯৩ দশমিক ৫২ ফুট। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হ্রদে অতিরিক্ত পানির চাপ কমাতে কাপ্তাই বাঁধের স্প্রিলওয়ের ১৬ গেট দিয়ে তিন ফুট উচ্চতায় সেকেন্ডে ৩৮ হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হচ্ছে। এছাড়া ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচ ইউনিটের মধ্যে চারটিতে ১৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আকস্মিক বন্যায় বাঘাইছড়ি পৌরসভাসহ উপজেলার প্রায় ৮ ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পৌরসভা এলাকাসহ উপজেলার সাজেক, আমতলী, সার্রোয়াতলী, রুপকারী, বঙ্গলতলী, খেদারমারা, মারিশ্যা ও বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে।
এছাড়া সদরের হ্রদ পাড়ের কয়েক হাজার পানিবন্দি হয়ে দুর্গতির মধ্যে পড়েছেন। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় লংগদু, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, নানিয়ারচর, কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বহু ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে, বর্ষণে ভূমিধসে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটিসহ জেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়কে যোগাযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে। সদরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে আবার ভূমিধসের শঙ্কা বিরাজ করছে।
বাঘাইছড়ি পৌরসভার মেয়র মো. জাফর আলী খাঁন জানান, পৌরসভার মধ্যে প্রায় ১ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি। লোকজনদের আশ্রয় পাঠানো হচ্ছে। এসব দুর্গত মানুষকে জরুরি মুহূর্তে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম জানান, পৌরসভাসহ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার মানুষ আকস্মিক বন্যার শিকার হয়েছেন। বন্যাকবলিত দুর্গত লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সুশীল প্রসাদ চাকমা/এএম/আরআইপি