সিলেটে বন্যায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সিলেট
প্রকাশিত: ০৮:৫৮ পিএম, ১২ আগস্ট ২০১৭

সিলেটের চার উপজেলায় আবারও টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার লক্ষাধিক মানুষ।

সিলেটের গোয়াইনঘাটে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়ে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। উপজেলার অধিকাংশ রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ির পাশাপাশি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পানি উঠায় রোববারের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরীক্ষা স্থগিত করা হলেও যথারীতি বিদ্যালয় খোলা থাকবে বলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়।

কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পিয়াইন এবং সারী নদী দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কারণে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে।

শনিবার দুপুর পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়ে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাটসহ বসতবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। এতে উপজেলার অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর বোনা আমন ও বীজতলা।

কৃষি অফিসের তথ্য মতে তলিয়ে যাওয়া ফসলি জমি ও বীজতলার পরিমাণ হবে আড়াই হাজার হেক্টর। বসতঘরে পানি উঠায় অনেকেই গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। গোখাদ্যেরও দেখা দিয়েছে চরম সংকট।
Shlhet

গোয়াইনাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাকির হোসেন জানান, বন্যাকবলিত কয়েকটি ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছি। বন্যাকবলিতদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে তা বিতরণ করা হবে।

এছাড়া জৈন্তাপুরে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বসতঘরসহ উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে অনেক গ্রামে। টানা কয়েক দিনের অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় জৈন্তাপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাতে ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি হয়ে জনদুর্ভোগ বাড়ছে।

এদিকে গত ৪ দিনের অতিবৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় জৈন্তাপুর উপজেলার বিরাইমারা, ১ নম্বর লহ্মীপুর, নম্বর লহ্মীপুর, চাতলারপাড়, বাওনহাওর, গড়েরপাড়, খারুবিল, মোয়াখাই, মুক্তাপুর, লামনীগ্রাম, তিলকইপাড়া, কাটাখাল, ঘিলারতৈল, গোয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, নায়াখেল, আগফৌদ, কাঞ্জর, হাজারী সেনগ্রাম, নয়াগাতি, বারগাতি, এছাড়া ফতেপুর, চিকনাগুল ও চারিকাটা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

কয়েকদিনের টানা বর্ষণের ফলে কর্মজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ার কারণে না খেয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছেন। পানিবন্দি এলাকা প্রশাসন কিংবা জনপ্রতিনিধিদের পরিদর্শন করতে যাননি বলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন।

বিশ্বনাথে গত কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত ও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে উপজেলাজুড়ে বন্যা দেখা দিতে পারে। সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের বেশ কয়েক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শনিবার দুপুরে উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের কয়েক গ্রাম পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বার্হী অফিসার অমিতাভ পরাগ তালুকদার। এসময় তিনি এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখেন।

জানা গেছে, বিশ্বনাথে গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন হাওর প্লাবিত হয়েছে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় আধাপাকা রাস্তা, পুকুর, খাল-বিল, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে যদি আরোও কয়েকদিন বৃষ্টি হলে বন্যার আশঙ্কা করেছেন উপজেলাবাসী। পুরো উপজেলার জনজীবন বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে।

টানা বর্ষণের ফলে স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে এবং দিনমজুর অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। এখনও উপজেলায় কোথাও প্লাবিত হয়নি খবর পাওয়া যায়নি। উপজেলার লামাকাজি ও দেওকলস ইউনিয়নের কয়েকটি নিম্নাঞ্চল রাস্তা পানির নিচের যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বলে ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান। যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
Shlhet

গত দুদিন ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে এলাকায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির কারণে লোকজন বাসাবাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়ন, খাজাঞ্চি ইউনিয়ন, রামপাশা ইউনিয়ন, বিশ্বনাথ ইউনিয়ন, দেওকলস ইউনিয়ন, দশঘর ইউনিয়ন, দৌলতপুর ইউনিয়নের নিম্মাঞ্চল প্লাবিত রয়েছে।

পানি বৃদ্ধি পাওয়া ফলে জমি রোপা আমন ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। উপজেলা সদরের বাসিয়া নদী, সুরমা নদীসহ পাহাড় থেকে নেমে আসা নদী ও ছড়ার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

এ ব্যাপারে লামাকাজি ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া বলেন, এভাবে বৃষ্টি হলে ইউনিয়নের মির্জারগাঁও, মাহতাবপুর, সোনাপুরসহ আরও কয়েক গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিতাব পরাগ তালুকদার বলেন, এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত রয়েছে। এখন পর্যন্ত উপজেলার কোথাও প্লাবিত হয়নি। তবে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে লামাকাজি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া বালাগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল আবারও টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি জানান, তৃতীয় দফার এই বন্যার কারণে কষ্টের মধ্যে আছেন উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ।

ছামির মাহমুদ/জেএইচ

 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।