‘এটা তেমন কিছুই না মামারা, আবার দেখা হবে’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বগুড়া
প্রকাশিত: ১২:০৩ পিএম, ১০ আগস্ট ২০১৭

বগুড়ায় ছাত্রী ধর্ষণ ও পরে মা-মেয়েকে ন্যাড়া করে নির্যাতনের মামলার ঘটনার মূল হোতা তুফান সরকার কারাগারেও রাজকীয়ভাবে দিন কাটাচ্ছেন।

কারা কর্মচারী-কর্মকর্তারা বিশেষ কারণে তুফান এবং তার সহযোগীদের সেবা যত্নে কোনো ত্রুটি রাখছে না। বগুড়া কারাগারের একাধিক সূত্র এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

এদিকে, আলোচিত এই ধর্ষণ মামলা তদন্তে গড়িমসি করার অভিযোগ উঠেছে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা সদর থানা পুলিশের (ওসি-অপারেশন) আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল তাকে ডেকে পাঠান। তিনি মামলার খোঁজখবর নেয়ার পর প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়ে মামলা দ্রুতগতিতে এগোনোর নির্দেশনা দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তরুণী ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করে মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করা মামলায় গ্রেফতার হওয়া তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশামনি, শাশুড়ি রুমি খাতুন, স্ত্রীর বড় বোন পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি ঘটনার পরে প্রকাশ্যে ও মিডিয়ার কাছে ঘটনার কথা স্বীকার করলেও রিমান্ডে যাওয়ার পরে তারা বদলে যায়।

যার কারণে তুফানকে চার দফা, রুমকিকে তিন দফা এবং অন্যদের একদফা রিমান্ডে নেয়া হয়। তারপর এই চারজনকে আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করতে রাজি হয়নি তারা।

শেষবার চতুর্থ দফা আদালতে হাজির করার সময় তুফান সরকার এমনভাবে অভিনয় করেছে যেন মনে হয় পুলিশ তাকে পিটিয়ে অসুস্থ বানিয়েছে। তবে শেষবার যখন আদালত তুফানের জামিনের আবেদন নাকোচ করে দেয় তখনই বদলে যায় তুফানের চালচলন।

আর যখন জেলখানায় নেয়ার জন্য পুলিশ ভ্যানের দিকে নেয়া হয় তখন সে প্রায় দৌড়ে গিয়ে প্রিজনভ্যানে গিয়ে ওঠে বসে। রাজনৈতিক নেতার স্টাইলে হাত নেড়ে তার বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলে, মামারা চিন্তা করিস না, এটা কিছুই না। আবার দেখা হবে।

বৃহস্পতিবার বগুড়ার আদালতে বেশ কয়েকজন আইনজীবী বলেন, পুলিশ কী তবে তাদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি না দেয়ার কথা বলে দিয়েছে! এই দৃশ্য দেখে অনেক আইনজীবী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদলেরও কথা বলেছেন।

বৃহস্পতিবার বগুড়া কারাগারের একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, তুফানের মতো পয়সাওয়ালা কারাবন্দিদের কোনো অসুবিধা হয় না। কারণ গুরুতর অপরাধে যেসব কয়েদির দীর্ঘ সাজা হয়, সেসব কয়েদিকে কারা কর্তৃপক্ষ শৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে তাদের ম্যাট পদে নিয়োজিত করে। আর ম্যাটরা বন্দিদের সার্বিকভাবে দেখাশোনার নামে নগদ সুবিধার বিনিময়ে নিজেদের পছন্দের অন্যান্য কয়েদি বা হাজতিদের দিয়ে কারা অভ্যন্তরেই নানা ধরনের বৈধ বা অবৈধ সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে।

কারা সূত্র আরও জানায়, ধর্ষক তুফান ও তার পরিবারের অর্থের অভাব না থাকায় কারাগারেও তারা সে রকম রাজার হালেই আছে। ঠিক রাজকীয়ভাবে কাটছে তার দিন।

বগুড়া কারাগারের সুপার মোকাম্মেল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশে তুফান যেদিন কারাগারে আসে সেদিনই তার নামে পিসিতে (প্রিজনস ক্যাশ) ২০ হাজার টাকা জমা হয়েছে। মঙ্গলবারও কেউ একজন ১০ হাজার টাকা পাঠিয়েছে। এই ধরনের ক্যাশ ডিপোজিট কারাবিধিতে বৈধ। কারাগারের ভেতরে এই পিসি থেকে অর্থ উঠিয়ে ক্যান্টিনে খাওয়া-দাওয়া করা যায়। খাওয়া-দাওয়া ছাড়াও আরও কিছু সুনির্দিষ্ট খরচ করা যায় এই অর্থ থেকে।

এ বিষয়ে বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল জানান, তরুণী ধর্ষণ ও মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। যেহেতু মামলার আইওর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে সে কারণে তাকে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। পুলিশের দিক থেকে আলোচিত এই মামলাটি তদন্তে কোনো রকম গাফিলতি করার সুযোগ নেই।

এএম/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।