সাওদা হত্যা মামলায় রাসেলের ফাঁসি
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাওদা (১৯) হত্যা মামলায় সহপাঠী রাসেল মিয়াকে (২২) ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাসেল মিয়ার উপস্থিতিতে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আনোয়ারুল হক ওই আদেশ দেন।
রায়ে বিচারক উল্লেখ করেছেন, দণ্ডিত রাসেল এ রায়ের বিরুদ্ধে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে উচ্চাদালতে আপিল করতে পারবেন।
সাওদা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এবং রাসেল ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার হাতেমপুর গ্রামের আ. রাজ্জাকের ২ মেয়ে ১ ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন নিহত সাওদা।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত রাসেল মাতুব্বর একই উপজেলার জ্ঞানপাড়া গ্রামের হারুন মাতুব্বরের ছেলে।
ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণার পরপরই আদালতের বারান্দায় হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন নিহত সাওদার বাবা মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক। তিনি রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত ফাঁসি কার্যকরের দাবি জানান। তিনি বলেন, তার মেয়ের মতো আর যাতে কাউকে এভাবে নৃশংসতার বলি হতে না হয়।
অন্যদিকে, রাসেলের বাবা হারুন মাতুব্বর বলেন, তিনি কৃষক। তার একমাত্র ছেলের লেখাপড়া বন্ধ করার জন্য ষড়যন্ত্র করে রাসেলকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে। আদালতে তিনি ন্যায় বিচার পাননি।
বরিশাল আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ( পিপি) অ্যাডভোকেট. গিয়াস উদ্দিন কাবুল মামলার নথির বরাদ দিয়ে জানান, মো.রাসেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক অস্বীকার করাকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় সাওদাকে এলোপাথারি কুপিয়ে জখম করে রাসেল পালিয়ে যান।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে হেলিকপ্টারযোগে ওই দিন সাওদাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে সাওদা মৃত্যুকোলে ঢলে পড়েন। এ ঘটনায় নিহত সাওদার মা শাহিদা বেগম বাদী হয়ে কোতয়ালি মডেল থানায় রাসেলসহ ২/৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন। ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর স্বজনদের মাধ্যমে ফাঁদ পেতে চট্রগ্রাম নগরীর ধুমপাড়া এলাকা থেকে রাসেলকে গ্রেফতার করে বরিশাল নিয়ে আসে পুলিশ। পরে রাসেল হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দী প্রদান করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাখাওয়াত হোসেন ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল মামলার তদন্ত শেষে একমাত্র রাসেলকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন। ১৯ জনের সাক্ষ্য শেষে আদালত মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।
এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. গিয়াস উদ্দিন কাবুল ও নিহত সাওদার মা শাহিদা বেগম।
তবে রাসেলের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাজিমউদ্দিন আহম্মেদ পান্না বলেন, তার মক্কেল ন্যায় বিচার পাননি। নিরপেক্ষ সাক্ষীদের যথাযথভাবে আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। তাই এ রায়ের বিরুদ্ধে তার মক্কেল উচ্চাদালতে আপিল করবেন।
সাইফ আমীন/এমজেড/এমএস