অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নীলফামারী
প্রকাশিত: ০৪:০১ এএম, ০৮ আগস্ট ২০১৭
ফাইল ছবি

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় গরু চুরির মিথ্যা অভিযোগে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ শেফালী বেগমকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে।

রোববার গভীর রাতে শেফালীর মামা ভটভটি চালক সহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ডিমলা থানায় মামলাটি করেন। মামলা নম্বর-১৬। মামলায় জড়িতদের বাদ দিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীকে আসামি করা হয়েছে। তবে সুস্থ হয়ে এ ঘটনায় জড়িত প্রকৃত আসামিদের নামে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন নির্যাতনের শিকার শেফালী বেগম।

মামলায় আসামিরা হলেন- খালিশা চাঁপানী ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর কাদের, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের হাতে আটক ওই ওয়ার্ডের গ্রামপুলিশ রশিদুল ইসলাম সর্দার, শেফালীর বড় বোন আকলিমার স্বামী রফিকুল ইসলাম ও শাশুড়ি অপেয়া বেগমসহ নামীয় ১৯ জন ও অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন।

মামলার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক তিনজনকে পুলিশ গ্রেফতার দেখায়। এদের রোববার বিকেলে আটক করেছিল পুলিশ। সোমবার দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। তবে নতুন করে কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

এ মামলায় খালিশা চাঁপানী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তামজিদার রহমান, ইউনিয়নের শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শিমুল ইসলাম, সদ্য বিএনপি হতে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী মোসলেম উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ও সামছুলের ছেলে বিএনপি কর্মী মজনুর রহমান মঞ্জুকে আসামি না করায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেফালী বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তিনি সেখানে সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, ঘটনায় জড়িতদের নাম বাদ দিয়ে ডিমলা থানার ওসি আমার মামা সহিদুল ইসলাম, আমার ছোটবোন শিউলি আক্তার মনিকে থানায় নিয়ে গিয়ে মামলা করান। ঘটনার সময় আমার মামা সহিদুল ইসলাম সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

শেফালী আরও জানায়, ডিমলা থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ওদের নাম বাদ দিয়ে উল্টো খালিশা চাঁপানী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তামজিদার রহমানকে মামলার এক নম্বর সাক্ষী করেছে। এমনকি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় গ্রামের অনেক মানুষের নাম জুড়ে দিয়েছে ওসি।

শেফালী আরও জানান, তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামি করে নিজে বাদী হয়ে মামলা করবেন। আর যারা জড়িত নয় তাদের মামলা হতে বাদ দেয়া হবে।

নীলফামারী সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল ডিমলা ও ডোমার) জিয়াউর রহমান বলেন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত ঘটনার সূত্রে পুলিশ তদন্ত করে সত্যতা পেয়ে থানায় মামলা নেয়া হয়েছে।

ঘটনায় কয়েক প্রভাবশালী নাম বাদ দেয়ার প্রসঙ্গে বলেন, ঘটনাটি তদন্তের পর কারা জড়িত বের হয়ে আসবে। কারণ মামলায় ১৯ জন নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন রয়েছে।

ডিমলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন সাংবাদিকদের ওপর যে চরম ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন তার ক্ষোভ তিনি সোমবারও দেখিয়েছেন।

সাংবাদিকরা মামলার কপি চাইতে গেলে ওসি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন মামলার কপি শুধু বাদী ও বিবাদী পাবে। থানা হতে সাংবাদিকদের মামলার কপি দেয়া হবে না। প্রয়োজনে সাংবাদিকরা মামলার কপি আদালত থেকে সংগ্রহ করবেন।

পরে সাংবাদিকরা মামলার কপি বিকল্প ব্যবস্থায় সংগ্রহ করতে বাধ্য হয়। মামলার এজাহারে দেখা যায় সংবাদপত্রে প্রকাশিত ঘটনার চিত্র রেখে আরও কিছু যোগ করা হয়। প্রভাবশালীদের মধ্যে যারা জড়িত ছিল তাদের আসামির নামের তালিকায় রাখা হয়নি।

মামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেয়া যায়, গ্রামটি পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, মামলায় শেফালী বাদী হলে প্রকৃত আসামিদের নাম চলে আসত। আমাদের কথায় কর্ণপাত করেননি ডিমলা থানার ওসি, উদোরপিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছেন। এতে জড়িত অনেকে বাদ পড়েছে।

মামলার বাদী শেফালীর মামা ভটভটি চালক সহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন আমি সকালে গ্রামের বাইরে ছিলাম। আমাকে খালিশা চাঁপানী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তামজিদার রহমান মোবাইলে ঘটনাস্থলে ডেকে আনেন। সেখানে আমার ভাগ্নিকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর মাটিতে ফেলে রেখেছিল তারা। আমার হাতে শেফালীকে তারা তুলে দিয়ে চিকিৎসা করতে বলে। আমি তাদের বলেছি তোমরা চিকিৎসা করে ওকে সুস্থ করে দিলে আমি নেব। এরপর আমি ঘটনাস্থল হতে চলে আসি।

খালিশা চাঁপানী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তামজিদার রহমানকে মামলার সাক্ষী করার বিষয়ে তিনি বলেন, ওই নেতাই তো আমাকে মোবাইলে ডেকে ঘটনাস্থলে আনেন। তিনি সব জানেন তাই তাকে সাক্ষী করেছি। রোববার বিকেলে পুলিশ আমাকে ও শেফালীর ছোট বোন শিউলীকে থানায় ডেকে নিয়ে আমাদের কথা শুনে পুলিশ এজাহার তৈরি করে। সেখানে আমরা দু’জনে স্বাক্ষর করি।

মামলায় আসামিদের নামের তালিকায় দেখা যায় খালিশা চাঁপানী ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কাদের (৬০), অপিয়ার রহমান (২৩) ও রফিকুল ইসলাম (৪২), আলী হোসেন (৩৫), আবু বক্কর সিদ্দিক (৩০) ও মনোয়ার হোসেন (২৮), দবির উদ্দিন (৫৫) ও আহেদুল ইসলাম (৩৮), আতাউল রহমান (১৯), তহমিনা বেগম (২৩), রূপালী বেগম (২৮), মনছুরা বেগম (২৪), তুলি বেগম (২১), ফাতেমা বেগম (৪০), সুলতানা বেগম (২৪), অপিয়া বেগম (৬০), রশিদুল ইসলাম (৪০), রাজিয়া বেগম (২৭) ও খালিকুন বেগমসহ (৫০) ৪/৫ জন অজ্ঞাত।

একটি পারিবারিক ঘটনাকে পুঁজি করে এলাকার কিছু প্রভাবশালী মহল শেফালীকে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে গত শুক্রবার দুপুরে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করে। ঘটনাটি শনিবার জাগো নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। গা ঢাকা দিয়েছে ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা।

জাহেদুল ইসলাম/আরএআর/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।