চাঁদপুরের অপহৃত কলেজছাত্র উদ্ধার : আটক ৪
কক্সবাজারে বেড়াতে এসে অপহরণের শিকার চাঁদপুরের কলেজ ছাত্র নুর মোহাম্মদ (২৬)কে চকরিয়ার পাহাড়ি এলাকা থেকে ৩২ ঘণ্টা পর উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় অপহরণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ চার অপহরণকারীকে আটক করেছে। রোববার সকালে উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার বাককুম পাহাড়ের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
চাঁদপুর থেকে কক্সবাজার বেড়াতে এসে শুক্রবার রাতে কক্সবাজার শহরের নিউমার্কেট থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। নুর মোহাম্মদ চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জের মুকিমাবাদ গ্রামের হাফেজ হোছাইন আহমদের ছেলে এবং হাজিগঞ্জ মডেল কলেজের বিবিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার পাশাপাশি নুর মোহাম্মদ পার্ট টাইম চাকুরি করেন পুস্তক প্রকাশনা সংস্থা আদিল ব্রাদাস ফেনী সদর উপজেলার বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে।
রোববার দুপুরে চকরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কক্ষে নুর মোহাম্মদ সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার সকালে চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ থেকে বাসযোগে ৯০জনের একটি পিকনিক পার্টি কক্সবাজার বেড়াতে আসেন। রাত আনুমানিক ৮টার দিকে কক্সবাজার শহরের নিউমার্কেট এলাকায় বাজার করতে গেলে বন্ধুত্বের আদলে অপহরণকারীরা তার সাথে ভাব জমিয়ে তোলেন। এক পর্যায়ে তাকে চা খাইয়ে অজ্ঞান করে তারা কৌশলে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, শুক্রবার রাত এবং শনিবার সারাদিন তাকে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে আটকে রাখে অপহরণকারীরা। পরে রোববার ভোরে চকরিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে।
চকরিয়া থানার অপারেশন অফিসার (এসআই) আবদুর রহিম বলেন, অপহরণের পর তার পরিবার থেকে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। বিষয়টি তার পরিবারের সদস্যরা কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসিকে অবহিত করেন। ওই সময় সদরের ওসি অপহরণকারীদের দেয়া নাম্বারে ১০ হাজার টাকা বিকাশ করেন। এরপর মোবাইল ট্যাকিং করে অপহরণকারীদের অবস্থান সনাক্ত করা হয়। এলাকাটি চকরিয়া উপজেলায় হওয়ায় চকরিয়া থানার ওসিকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন সদর ওসি।
শনিবার গভীর রাতে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) মো.মাসুদ আলম, থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো.কামরুল আজম, থানার এসআই সুজন তালুকদার ও সুকান্ত চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশ পৃথক দলে অভিযানে নামেন।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রভাষ চন্দ্র ধর বলেন, অভিযানের শুরুতেই রাতে গ্রেফতার করা হয় খুটাখালী বাজার থেকে বিকাশ এজেন্ট স্থানীয় দক্ষিণপাড়ার মোজাহের আহমদের ছেলে লুৎফুর রহমানকে (৩৩)। অপহরণকারীরা তার বিকাশ নাম্বার থেকে মুক্তিপণের লেনদেন করে থাকে বলে প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে।
ওসি বলেন, রাতে লুৎফুর রহমানের স্বীকারোক্তি মতেই আটক করা হয় খুটাখালী ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে ইমরান হোসেনকে (২২)। এরপর রোববার ভোরে অভিযান চালিয়ে খুটাখালী ইউনিয়নের পাহাড়ী জনপদ বাককুম এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে অপহরণকারী দলের সদস্য কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডি দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২৫) ও একই এলাকার মৃত ফজল করিমের ছেলে মো.পিয়ারুল ইসলামকে (২৬)। তাদের স্বীকারোক্তিতে খুটাখালী ইউনিয়নের বাককুম এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ওই কলেজ ছাত্রকে।
কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) মো.মাসুদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, আটকের পর চার অপহরণকারী ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আটকদের মধ্যে দুইজনকে আগের একটি অপহরণের ঘটনায় জড়িত রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। অপহরণের শিকার ও পরে উদ্ধার হওয়া ভুক্তভোগী ডাম্পার চালকরা তাদের সনাক্ত করেছেন। তাই অপহরণকারী চক্রের সন্ধান নিশ্চিত করতে আটককৃত চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হবে। এ ব্যাপারে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
সায়ীদ আলমগীর/এসএস/পিআর