ঝালকাঠিতে ব্যস্ত সময় কাটছে কারিগরদের


প্রকাশিত: ১১:১৭ এএম, ২৯ মে ২০১৫

ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়নের সরই গ্রাম পানের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এ এলাকার পান চাষিদের পাশাপাশি অন্য পেশার এবং শ্রমজীবী লোকজনও পিছিয়ে নেই কোন ক্ষেত্রে। তাদের প্রচেষ্টা চলছে জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে।

এখন জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি। খাল-বিল, নদী-নালায় নতুন পানি উঠতে শুরু করেছে। সেই সাথে দেশীয় মাছের প্রজনন হওয়ায় মাছের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। দেশীয় মাছের স্বাদ নিতে গ্রামের খালে এবং উম্মুক্ত জলাশয়ে চাই-বুছনা (এক ধরণের মাছ ধরার ফাঁদ) পেতে মাছ ধরছে গ্রামের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। চাহিদার সামাল দিতে এবং মৌসুমী আয়ে চাই-বুছনা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা।

কেবল ঘরের কর্তা ব্যক্তি নয়, বুনন কাজে সহযোগিতা করছে স্ত্রী, পুত্র, ভাই, বৃদ্ধ মা ও বাবা। তাদের সহযোগিতায় অনেকটাই এগিয়ে যায় এ বুননের কাজ। এমনটাই জানালেন সরই গ্রামের কারিগর দেলোয়ার হোসেন।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, মাঘ মাসে চোখের দৃষ্টিতে অনুমান নির্ভর করে ৮০  থেকে ১শ’ টাকার প্রতিটি বাঁশ কিনতে হয়। এরপর বাঁশ সাইজমত কেঁটে পানিতে ভিজিয়ে রেখে শলা তৈরি করতে হয়। প্রতি সপ্তাহের ৩ দিন বাঁশ থেকে শলা তৈরি করি এবং বাকি ৪ দিন রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। প্রতিটি বুছনা তৈরিতে ২শ’ ২০ থেকে ২শ’ ৫০ টি শলা লাগে। একটি ভালো বাঁশ থেকে ৩ টি বুছনা তৈরী করা যায়। মাঘ মাস থেকে এ কাজ শুরু করেছি আশ্বিন মাস পর্যন্ত চলবে। আমার এ কাজে সহযোগিতা করছে ভাই জালাল (১৮), স্ত্রী নাজমা (২৭), স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে নাজমুল, দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া মীম, সুস্থতা বুঝে বৃদ্ধ মা নুরবানু ও বাবা সুলতান শেখ। মূলধনের অভাবে ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে প্রতিবছরই কাজ করি।

তিনি আরো বলেন, একেকটি বুছনা বিক্রি করি ২৬০ টাকা থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত। ঝালকাঠি স্টেডিয়ামের মোড়ে প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারে ৬০ টি বুছনা নিয়ে বিক্রি করি। আমার কাছ থেকে অন্য বিক্রেতারা পাইকারি কিনে নেয়। সংসারের খরচ, পিতা-মাতার চিকিৎসা খরচ, ছেলে-মেয়ের পড়াশুনার খরচ এবং ঋণ শোধ করে সব মিলিয়ে বছরের আয়-ব্যায় সমান সমান থাকে। সরকারি সহায়তায় সহজ শর্তে এবং বিনা সুদে ঋণ পেলে একটু ভালোভাবে জীবন কাটানোর আশা প্রকাশ করেন দেলোয়ার ও তার পরিবার।

ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও স্থানীয় প্রবীণ রাজনীতিক ডা. লুৎফর রহমান বলেন, দেলোয়ারের কার্যক্রম কুটির শিল্পের আওতায় পড়ে। আর্থিক সমস্যার কারণে জেগে উঠতে পারছে না। সহায়তা পেলে স্বচ্ছল হতে পারতো।

ঝালকাঠি বিসিকের সহকারী মনিটরিং এবং মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. আল আমিন বলেন, তারা আমাদের কাছে আসলে নিয়মানুযায়ী প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা যাবে।

আতিকুর রহমান/এসএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।