বেড়েই চলেছে গামার পায়ের মাংসপেশি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জামালপুর
প্রকাশিত: ০৯:২০ এএম, ৩০ জুলাই ২০১৭

অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার রিয়াজুল করিম গামা। প্রায় তিন যুগ ধরে ডান পায়ের উরুতে মাংসপেশি বেড়ে এখন ঝুলে পড়েছে। এতে করে কর্মক্ষম হয়ে পড়েছেন তিনি। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিটি বেকার হয়ে পড়ায় স্ত্রী-সন্তানদের কঠিন জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এ সমস্যার মাঝে নিজের চিকিৎসাও করাতে পারছেন না গামা।

মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের বানিয়াবাড়ি গ্রামের রিয়াজুল করিম গামার (৪৭) ডান পায়ে ১৯৮৩ সালে প্রথম এই রোগ দেখা দেয়। শুরুর দিকে গামার ডান পায়ের উরুতে মাংস বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি দরিদ্র পরিবার গুরুত্ব না দিলেও বছরের পর বছর সেই মাংস বেড়ে ঝুলে পড়তে থাকে। ওই সময় চিকিৎসার জন্য ডাক্তার দেখালেও এই রোগ নির্ণয় করতে পারেননি চিকিৎসকরা।

দরিদ্র পরিবারের পক্ষে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব না হওয়ায় গামার পায়ের মাংসপেশি দিন দিন বেড়ে ঝুলে যাওয়ার পাশাপাশি মাথা এবং সারাদেহে এ সমস্যা ছড়িয়ে পড়েছে।

jamalpur

বর্তমানে কর্মক্ষম অবস্থায় স্ত্রী শিলা বেগম (৩২) আর তিন সন্তান শামসুল হক (১৩), মেয়ে রাফিয়া সুলতানা (১০) এবং জান্নাতুল ফেরদৌসীকে (২) নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে গামাকে।

বড় ছেলে শামসুল হক স্থানীয় নতুন কুঁড়ি বিদ্যাপীঠ নামক স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে এবং মেয়ে বানিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। আর্থিক সংকটে সন্তানদের লেখাপড়া এবং সংসারের খরচ জোগান দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে তার। দিন যতই যাচ্ছে চিকিৎসার অভাবে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়ে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন গামা। তবে পরিবারের সদস্যদের আশা গামাকে উন্নত চিকিৎসা করানো গেলে সুস্থ হয়ে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে।

jamalpur

গামার স্ত্রী শিলা বেগম বলেন, পায়ের মাংস বেড়ে যাওয়ার জন্য এখন ঠিকভাবে চলাচল করতে পারে না। আগে ব্যথা না করলেও এখন প্রচণ্ড ব্যথায় সারারাত নিজেও ঘুমাতে পারে না, আমাদেরও ঘুমাতে দেয় না।

ছেলে শামসুল হক এবং মেয়ে রাফিয়া সুলতানা জানায়, বাবার এ অসুখ দেখে খুব কষ্ট লাগে। অন্যদের বাবা সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে, কিন্তু আমাদের বাবা চলাফেরা করতে পারে না। আমাদের স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শিখব। অভাবের কারণে সেটাও বন্ধ হতে চলেছে।

jamalpur

গামার ভাই রাশেদুল করিম লাভলু জানান, অনেকগুলো ভাই-বোন থাকার কারণে আমাদের বাবা-মা অসুখটার গুরত্ব দেয়নি। পরে যখন সমস্যটা বেশি হয় তখন ডাক্তার দেখানো হয়, কিন্তু রোগ ধরতে পারেনি। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসাও করা হয়নি। এখন ওর অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রাসেল সাবরিন জানিয়েছেন, রিয়াজুল করিম গামার পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও যোগাযোগ করা হয়নি, তবে রিয়াজুল করিমের বিষয়ে খোঁজ নিতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং তার চিকিৎসার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

শুভ্র মেহেদী/এমএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।