কুড়িগ্রামে বন্যা কবলিত এলাকায় পশুর রোগ-বালাই বাড়ছে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০২:৪৩ পিএম, ২২ জুলাই ২০১৭

কুড়িগ্রামে বন্যা কবলিত এলাকায় ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে গবাদি পশুর নানা রোগবালাই। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্য সংকট। বন্যায় কৃষি ও মৎস খামারিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হওয়ার পর গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পরেছে কৃষকরা। সামনে ঈদ। গরু ও ছাগল পালনকারীরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য এ’দুটোর উপর ভরসা করে। কিন্তু ফসলহানির পর গবাদিপশু রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হওয়ায় ভীষণ বিপাকে পরেছে মালিকরা।

সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের মালেকা (৩৫) জানান, গরু একটা কিনি আনছি। বাড়ির মধ্যে পানি উঠছে। ইয়াতে গরু কোনার ঘাও হইছে। সেই গরু খায় না। আজ ১৫ দিন থাকি খুদির জাউ আন্ধি ঘাটা দিয়া গরু কোনাক খোওয়াবার নাগছি। ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য কাঁইয়ো আইসে নাই। হামরায় ডাক্তার আনি চিকিৎসা দিবের নাগছি।’

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর যাত্রাপুরের কৃষক আবুল মিয়া জানান, কোরবানি ঈদে বিক্রি করার জন্য গরু পালন করছি। বন্যায় গো-খাদ্য সংকটে পরে গরুর স্বাস্থ্যহানী ঘটেছে। প্রকৃত মূল্য পাই কিনা সন্দেহ রয়েছে।

তবে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, চর এলাকায় গবাদিপশু যতটা না আক্রান্ত হয়েছে তার চেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে নতুন নতুন পানিবন্দি এলাকায়। এসব এলাকার গবাদিপশু খাদ্য সংকটের কারণে বাতনা বা খুরা রোগ দেখা দিয়েছে। এছাড়াও জানা গেছে, যাত্রাপুর বাজারে ভারত থেকে যেসব গরুর বাছুর সীমান্ত পেরিয়ে আনা হচ্ছে তাদের মধ্যে অনেক গরু খুরা রোগে আক্রান্ত।

বিষয়টি বাজারের ইজারাদারের লোকজন স্বীকার করলেও বাজারের সাবেক ইজারাদার ও বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত আব্দুল গফুর জানান, বাইরের গরুর মধ্যে কোনো সমস্যা নেই বরং যাত্রাপুরের খাসেরচর, চর যাত্রাপুর ও চর ফারাজি পাড়ায় দেশীয় গরুর মধ্যে খুরা রোগ দেখা দিয়েছে।

ভগবতিপুরের মানিক মেম্বার ও কালির আলগা চরের আবুল হোসেন জানান, চরে গবাদিপশু পানিবাহিত রোগে তেমন একটা আক্রান্ত হয় নাই। পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় এবং পূর্ব প্রস্ততি থাকায় তারা সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। কিন্ত বিভিন্ন জায়গায় তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে বন্যা হওয়ায় এসব নতুন এলাকায় মানুষ ও গবাদি পশু রোগব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত হয়েছে। এদিকে বন্যায় মৎস ও পশু সম্পদের ক্ষতি হলেও সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণের জন্য এখনও কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

যাত্রাপুরের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, বন্যা কবলিত এলাকায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। খড় ঘাসসহ গোয়ালঘর ও চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় এবং ঘাস খাবারের অনুপযোগী হওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে ভীষণ বিপাকে পরেছেন মালিকরা। বাধ্য হয়ে কাঁশ, বাঁশের পাতাসহ নানা ধরনের লতাপাতা খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করায় পশু আক্রান্ত হচ্ছে নানান রোগ-ব্যাধিতে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দীপক রঞ্জণ সাহা বলেন, পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বন্যা পরবর্তী গবাদি পশুর রোগবালাই স্বাভাবিক ঘটনা। আমাদের ৯টি মেডিকেল টিম কাজ করছে মাঠ পর্যায়ে। পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন ও ওষুধ রয়েছে।

জেলা মৎস অফিস সূত্র জানায়, চলতি বন্যায় জেলার ৬টি উপজেলার এক হাজার ৫৯৪টি পুকুর নিমজ্জিত হয়েছে। এতে ২৬৩ মেট্রিকটন মাছ ভেসে গেছে। যার মূল্য ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারিভাবে কোনো ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

নাজমুল/এমএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।