রাস্তায় বের করে দেয়া মাকে ঘরে ফেরালেন ইউএনও
মাত্র ২১ শতক কৃষি জমির জন্য বৃদ্ধ মাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয় পাষণ্ড ছেলে মো. কামাল হোসেন। এমনকি ঘরে তালাও ঝুলিয়ে দেয় ছেলে। পরে ওইদিনই দুপুরে মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শহীদুল ইসলামের কাছে এসে ঘটনাটি জানান বৃদ্ধ ফিরোজা বেগম (৬৫)। ঘটনা শুনে তালা ভেঙে বৃদ্ধাকে ঘরে তুলে দেন ইউএনও। গত বৃহস্পতিবার মতলব দক্ষিণ উপজেলার উত্তর ডিঙ্গাভাঙা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ইউএনও শহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, বৃদ্ধা ফিরোজা বেগমের কাছে ঘটনা শুনে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে এলাকাবাসীকে ডেকে তালা ভেঙে তাকে ঘরে তুলে দেই। দখল বুঝিয়ে দেই তার বেদখলি জমির। কিছু টাকা ও শাড়ি-কাপড়ও তুলে দেওয়া হয় বৃদ্ধার হাতে।
তিনি আরো জানান, দায়িত্ববোধ থেকেই ওই বৃদ্ধার পাশে দাঁড়িয়েছি। তার জন্য বয়স্ক ও বিধবা ভাতারও ব্যবস্থা করা হবে।
এলাকাবাসী জাগো নিউজকে জানান, ফিরোজার স্বামীর বাড়ি মতলব উত্তর উপজেলার রসুলপুর গ্রামে। তার বাবার বাড়ি মতলব দক্ষিণ উপজেলার উত্তর ডিঙ্গাভাঙা গ্রামে। স্বামী মারা যাওয়ার পর বাবার বাড়িতে একমাত্র সন্তান কামাল হোসেনকে (৩২) নিয়ে বসবাস করছেন ফিরোজা। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ২১ শতক জমি চাষবাস করে কোনো রকমে বেঁচে আছেন।
দু-তিন বছর আগে ছেলের বিয়ে দেন। এরপর থেকে ছেলে ও ছেলের বউ তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল। জমি লিখে দেওয়ার জন্য মায়ের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় কামাল। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে একাধিকবার নির্যাতনের বিচার চেয়েও কোনো সমাধান পাননি ফিরোজা।
ঘটনার দিন ফিরোজাকে গালাগাল ও মারধর করে ছেলে কামাল ও তার স্ত্রী। জমি নিজের নামে দলিল করে সেখানে জোর করে ফিরোজার সই আদায় করে কামাল। তারপর মাকে ঘর থেকে বের করে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
পরে দুপুর একটার দিকে ফিরোজা মতলব দক্ষিণ ইউএনওর কাছে গিয়ে ঘটনাটি জানান। ইউএনও ফিরোজার বাড়িতে আসেন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও লোকজনকে ডেকে ঘরের তালা ভেঙে তাকে ঘরে তুলে দেন। ছেলে কামাল যাতে মায়ের জমি মাকে দলিল করে ফিরিয়ে দেয়, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে সেই দায়িত্বও দেন।
এলাকাবাসী আরো জানান, ঘটনার পর থেকে মো. কামাল হোসেন ও তার স্ত্রী পলাতক।
ফিরোজা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার পোলা আমারে মাইরা ঘরছাড়া করছে। জমিনডাও তার নামে লইয়া গেছে। ইউএনও সাবে আমারে ঘরে তুইলা দিছে। জমি ফিরাইয়া দিছে। কিছু টেয়া ও কাপড় দিছে। ওনার অছিলায় সব ফিরা পাইলাম।’
উপাদী উত্তর ইউপির চেয়ারম্যান মো. শহিদুল্লাহ প্রধান জাগো নিউজকে বলেন, ফিরোজার ছেলে বাড়ি এলে সালিশ বসানো হবে। মাকে জমি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করা হবে।
ইকরাম চৌধুরী/এফএ/এমএস