হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ভাঙচুর, আহত ২৫
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে তাণ্ডব চালিয়েছে বিক্ষুদ্ধ জনতা ও স্থানীয় মাদ্রাসা ছাত্ররা। শুক্রবার জুমার নামাজের পর এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, দুই ডাক্তার, দুই নার্স, পাঁচ কর্মচারী, সাত পুলিশ সদস্যসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন।
আহতদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. পবিত্র কুমার কুন্ডু, স্টাফ নার্স কাকতী রানী বল ও পুলিশ কনস্টেবল শেখরকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ মে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মিত্রডাঙ্গা গ্রামের ননী গোপাল বালার মেয়ে মনা ভারতী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সম্প্রতি তিনি হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে খাদিজাতুল কোবরা নাম ধারণ করেন এবং টুঙ্গিপাড়ার গহরডাঙ্গা গ্রামের আকবার হোসেনকে ধর্ম পিতা ডাকেন।
শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে খাদিজাতুল কোবরা হাসপাতালে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স কাকতী রানী বল তার শরীরে ইনজেকশন পুশ করেন। এর পরপরই খাদিজাতুল কোবরা মারা যান।
একজন নও মুসলিম রোগীকে হাসপাতালের হিন্দু নার্স ইনজেশন পুশ করে মেরে ফেলেছে- এমন খবরে এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়লে হাজারো বিক্ষুদ্ধ জনতা ও স্থানীয় মাদ্রাসার ছাত্র সংঘবদ্ধ হয়ে হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এ সময় তারা ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের বেধড়ক মারপিট, অফিস, ডাক্তার-নার্স ও কর্মচারীদের বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে মধ্যযুগীয় কায়দায় ভয়াবহ তাণ্ডব সৃষ্টি করে।
তাদের এ হামলায় ডাক্তার, নার্স ও সাধারণ রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জীবন রক্ষায় তারা পালিযে যাওয়ার চেষ্টা করেন। হামলাকারীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. পবিত্র কুমার কুন্ডু ও সিনিয়র স্টাফ নার্স কাকতী রানী বলকে গুরুতরভাবে জখম করেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ বাধে। এতে পুলিশ কনস্টেবল শেখরসহ সাত পুলিশ কনস্টেবল এবং অপর দশজন আহত হয়। পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও রবার বুলেট ছুড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
জেলা প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান ও পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শে জাহিদ হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সফিউলাহ , টুঙ্গিপাড়ার পৌর মেয়র ইলিয়াস হোসেন সরদার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সোলায়মান বিশ্বাসসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
নিরপত্তাহীনতার কারণে ডাক্তর, নার্স ও কর্মচারীরা হাসপাতালে কাজ করতে পারছেন না। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৬০-৭০ জন রোগী আতঙ্কে সময় পার করছনে। তাদের চিকিৎসার নেওয়ার কোনো পরিবেশ ও ব্যবস্থা নেই।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স বিজলী রাণী পাইক জানান, অনুকূল পরিবেশ ফিরে না আসা পর্যন্ত আমাদের পক্ষে হাসপাতালে কাজ করা সম্ভব না। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছি।
জেলা প্রশাসক বলেন, হাসপাতালের ডাক্তার ,নার্স ও কর্মচারীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদেরকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত। পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। হামলাকারীদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে এ ঘটনায় বিএমএ গোপালগঞ্জ জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি।
হুমায়ূন কবীর/বিএ/পিআর