যাত্রীদের উদ্ধারের সময় জীবনের চিন্তা করিনি : জাগো নিউজকে পারভেজ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: ০৩:৫২ পিএম, ০৮ জুলাই ২০১৭

কুমিল্লায় দুর্ঘটনাকবলিত একটি বাস থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নারী-শিশুসহ অন্তত ২২ জন যাত্রীকে উদ্ধারের পর হাইওয়ে পুলিশের কনস্টেবল পারভেজ মিয়ার সাহসিকতাপূর্ণ বীরত্বগাথা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। গত বছরের আগস্ট মাসে তিনি যোগ দেন হাইওয়ে পুলিশে।

শনিবার রাতে মোবাইল সাক্ষাৎকারে পারভেজ জাগো নিউজকে জানান, কারও প্রশংসা কিংবা পুরস্কার পাওয়ার আশায় তো যাত্রীদের প্রাণ রক্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ির গ্লাস ভেঙে নামিনি।

তিনি বলেন, যখন দেখলাম চোখের সামনে যাত্রীরা ভেতরে আটকা পড়েছে, কীভাবে গাড়ির গ্লাসগুলো ভেঙে ফেলি তখন একটু ব্যথাও পাইনি। এখন অবশ্য বুঝতে পারছি পুরো শরীরেই আমার ব্যথা।

পারভেজ বলেন, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাই ছোটবেলা থেকেই আমি ও আমার ছোট ভাই গ্রামের ভালো কাজের প্রতি উৎসাহী হই। দাউদকান্দিতে আমার চোখের সামনে যখন যাত্রীবাহী একটি বাস খাদে পড়ে যায়, তখন অনেক লোকই এগিয়ে আসেন এবং অনেকে ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু নর্দমা ও বিষাক্ত পানিতে গাড়ির ভেতর আটকে থাকা নারী ও শিশুসহ যাত্রীদের চিৎকার শুনে কেউ যায়নি। আমি তখন মানবিক কারণে দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি।

তিনি বলেন, গাড়ির কাছে গিয়ে দেখি অনেকে হাতের ইশারায় সাহায্য চাচ্ছে, তখন গাড়ির গ্লাস ভাঙা শুরু করি। কিন্তু গাড়িটি উল্টে থাকায় ও জানালার গ্লাস বন্ধ থাকায় ঘটনার আকস্মিকতায় অনেক যাত্রীই ভেতর থেকে বের হতে পারছিল না। আমার আশঙ্কা ছিল নর্দমাটিতে বিষাক্ত গ্যাস জমা থাকতে পারে, তাই আমার কোমরে একটি গামছা বেঁধে স্থানীয় এক লোককে গাড়ির কাছে রেখে বলি ভেতর থেকে আমার কোনো সাড়া শব্দ না পেলে আমাকে টেনে তুলবেন। এভাবেই অন্তত ২০/২২ জন যাত্রীকে উদ্ধার করি।

পারভেজ বলেন, এ কাজে আমার কর্মস্থল, ঊর্ধ্বতন অফিসার, জনগণ এবং মিডিয়া যেভাবে উৎসাহ দিচ্ছে এতে সত্যিই আমি আনন্দিত ও গর্বিত।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার হোসেনদি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেমের ২ ছেলে ও ২ মেয়ে। পারভেজ মিয়া ভাইদের মধ্যে সবার বড়। ২০০৮ সালে স্থানীয় হোসেনদি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং সোনারগাঁও ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পরই সংসারের হাল ধরেন তিনি। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় চাকরির পর গত বছর যোগ দেন হাইওয়ে পুলিশে।

জীবনের স্বপ্ন কি? এ প্রসঙ্গে পারভেজ জানান, শিক্ষায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেয়ার ইচ্ছা থাকলেও শিক্ষা জীবন শেষ না করেই আমাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। তবুও আমার কর্মস্থলে নিজের যোগ্যতা ও মেধা দিয়ে পদোন্নতি নিয়ে আমি জনগণের সেবা করতে চাই।

উল্লেখ্য, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা থেকে মতলবগামী একটি বাস অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে খাদে পড়ে যায়। উপস্থিত লোকজন যখন দাঁড়িয়ে দুর্ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করছিলেন, তখন গৌরীপুরে দায়িত্বরত দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার কনস্টেবল পারভেজ মিয়া মহানায়কের মতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পঁচা ও গন্ধযুক্ত ময়লা ডোবার পানিতে লাফিয়ে পড়েন এবং পানির নিচে গাড়ির ভেতর গিয়ে শিশুসহ অন্তত ২২ জন যাত্রীকে বের করে আনেন।

কামাল উদ্দিন/এমএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।