স্কুলের ফার্স্ট বয় থেকে যেভাবে শীর্ষ জঙ্গি


প্রকাশিত: ০২:৫৯ পিএম, ০৮ জুলাই ২০১৭

প্রথম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষায় প্রথম ছাড়া কখনও দ্বিতীয় হননি তিনি। ৫ম শ্রেণিতেও পেয়েছিলেন বৃত্তি। পাবনা জিলা স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া ১০ জনের একজন ছিলেন তিনি।

যার শিক্ষা জীবনের বর্ণনা দেয়া হলো তিনি হলেন রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলা চালানোর অন্যতম পরিকল্পনাকারী সদ্য পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া উত্তরাঞ্চলীয় জেএমবির কমান্ডার সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ।

পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের খাতায় তার নাম সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ হলেও আসলে এটা তার নাম নয়। এ নামে এলাকার লোকজন কেউ তাকে চেনে না। তার প্রকৃত নাম আব্দুর সবুর খান ওরফে হাসান।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পদ্মা ও গড়াই নদীবেষ্টিত একটি ইউনিয়ন হচ্ছে চর সাদিপুর ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের চর সাদিপুর কাবলিপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক রেজাউল করিম ওরফে রাজেম শেখের ১০ ছেলে-মেয়ের মধ্যে মাহফুজ ওরফে হাসান চতুর্থ।

আব্দুর সবুর খান ওরফে হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজের ছোট ভাই হাফিজুর রহমান সাকিবও (২৫) ভাইয়ের মতো একজন জঙ্গি। ভাই আব্দুর সবুর খানের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। ২০১৫ সালে সে সাদিপুর আলিয়া মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করে।

জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত বছর র‌্যাব-পুলিশ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সাকিবকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে সে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ১০ ভাই-বোনের মধ্যে আব্দুর সবুর খান ওরফে হাসান চতুর্থ। আর সাকিব সবার ছোট। অন্য তিন ভাই স্বাভাবিক জীবন-যাপন করেন। বড় ভাই নজরুল ইসলামের এলাকায় চায়ের দোকান রয়েছে। আরেক ভাই মনিরুল ইসলাম একটি ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করেন এবং আরেক ভাই হেলাল কুমিল্লায় কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন।

শীর্ষ জঙ্গি হাসানের বোন রহিমা বেগম জানান, আমার ভাই ছোটবেলা থেকে খুব ভালো ছাত্র ছিল। স্কুলের পরীক্ষায় কোনো দিন সে প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হয়নি। ৫ম শ্রেণিতে সে বৃত্তি পেয়েছিল। নিজের পড়াশোনার খরচ সে নিজেই চালাত। প্রতিদিন সে বাড়ি থেকে পাবনায় নদী পার হয়ে স্কুলে যাতায়াত করত। তার ভাই যে জঙ্গি এটা তারা প্রথম জানতে পারেন ২০০৫ সালে যখন র‌্যাব-পুলিশ তাকে খুঁজতে বাড়িতে আসে। তখন তার ভাই পাবনা জিলা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

র‌্যাব-পুলিশ বাড়িতে অভিযান চালানোর পর থেকেই সে বাড়ি ছাড়া। সে সময় মোবাইল ফোনে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। ২০০৮ সালে স্ত্রীকে নিয়ে শেষবারের মতো সে বাড়িতে এসেছিল। এরপর থেকে ভাই আব্দুর সবুর খান ওরফে হাসানের সঙ্গে আর পরিবারের সদস্যদের কোনো যোগাযোগ নেই বলে দাবি করেন বোন রহিমা বেগম।

চর সাদিপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফতাব হোসেন বলেন, ছোটবেলা থেকেই হাসান খুব ভালো ছাত্র ছিল। প্রায় ৮-১০ বছর তাকে আর এলাকায় দেখা যায়নি।

শুক্রবার রাত ৩টার দিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থেকে উত্তরাঞ্চলীয় জেএমবির কমান্ডার সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ প্রকৃত নাম আব্দুুর সবুর খান ওরফে হাসানসহ নব্য জেএমবি’র চার সদস্য গ্রেফতার করে।

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেও মোস্ট ওয়ান্টেড ছিল মাহফুজ।

২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়া গড় বিস্ফোরণের পর ভারত সরকার তাকে ধরতে ১০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করে। ২০০৬ সালে সে ভারতে পালিয়ে যায়। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সে জেএমবির ভারতীয় শাখার আমির ছিল। গুলশান হামলার পলাতক চার জঙ্গির একজন ছিল সে। গত বছর হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলার পরিকল্পনার সময় সে উপস্থিত ছিল। হামলার আগে সে অস্ত্র ও গ্রেনেড নিয়ে আসে। ২০১৪ সালে সে ফের ঢাকায় ফিরে আসে। এরপর সে পুরনো জেএমবি ছেড়ে যোগ দেয় নব্য জেএমবিতে।

এমএএস/আরআইপি

 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।