বাবা-মা ছাড়াই ঈদ করল ওরা


প্রকাশিত: ০৯:০৯ এএম, ২৮ জুন ২০১৭

মীম (৪) ও সুমাইয়া (১৮ মাস), রাকিব (৬) ও ফারিয়া (২)। প্রকৃতির নিষ্ঠুর থাবায় এ অবুঝ চার শিশুকে চিরদিনের জন্য হারাতে হয়েছে প্রিয় বাবা-মাকে। ওরা এখন রাঙামাটি সরকারি কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে। সেখানেই প্রথমবারের মতো বাবা-মাকে ছাড়া ঈদ কেটেছে। আর কখনও প্রিয় বাবা-মার সঙ্গে ঈদ হবে না ওদের। কখনও বাবা-মায়ের আদর, স্নেহ, মমতা পাবে না দুর্ভাগা এ চার শিশু।

গত ১৩ জুন রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে মাটি চাপায় মারা যান মীম-সুমাইয়ার বাবা সালাউদ্দিন ও মা রহিমা বেগম এবং রাকিব-ফারিয়ার বাবা দরবেশ আলী। রাকিব ও ফারিয়ার মা রাবেয়া বেগম তাদের ত্যাগ করে অনেক দিন আগেই চলে গেছেন অন্যত্র। বাবা-মাহারা চার অবুঝ শিশু এখন একই আশ্রয় কেন্দ্রে। ঠাঁই হয়েছে মীম ও সুমাইয়ার চাচা কাউসার এবং রাকিব ও ফারিয়ার নানি সালেহা খাতুনের সঙ্গে।

আশ্রয়কেন্দ্রে কথা হয় কাউসার ও সালেহা খাতুনের সঙ্গে। তারা জানান, বসতবাড়ি ছিল শহরের রূপনগর এলাকায়। মাটিচাপায় বিলীন হয়ে তাদের বসতবাড়ির আর চিহ্নও নেই। তারা এখন আশ্রয় কেন্দ্রে। সেখানে বাবা-মাহারা শিশুদের নিয়ে ঈদ করেছেন কাউসার এবং সালেহা খাতুন।

আশ্রয় কেন্দ্রে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে সুমাইয়া। তখন সে চাচার কোলে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মীমের চেহারায় ফ্যাকাসে ভাব। যেন অজানা ভয় আর হতাশার ছাপ পিছু ছাড়ছে না ওর।

চাচা কাউসার বলেন, ওদের বাবা-মা কোথায় তা বোঝে না ওরা। সুমাইয়া সারাক্ষণ খোঁজে মাকে। বাবা-মায়ের পথ চেয়ে সারাক্ষণ বসে থাকে মীম।

Rangamati

কাউসার জানান, তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। ওদের বাবা-মা মারা যাওয়ার পর থেকে তার কাছে রয়েছে মীম আর সুমাইয়া। এখন বাবা, মায়ের দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। ওরা যাতে বাবা-মায়ের শূন্যতা বোধ করতে না পারে কষ্ট করে হলেও সেভাবে লালন-পালন করতে চান দুই ভাতিজিকে।

তিনি বলেন, ওইদিন পাহাড় ধসে তাদের রূপনগরের বসতবাড়িতে ছিলেন ছয়জন। মাটিচাপায় ভাই-ভাবী মারা গেছেন। মা সুফিয়া খাতুন আর ভাতিজি মীম, সুমাইয়াসহ বেঁচে যান তারা চারজন। দুর্যোগের পর কেউ কেউ লালন-পালনের জন্য মীম, সুমাইয়াকে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু ওদের বাবা, মায়ের আদর-যত্নের কথা ভেবে নিজের বুকে আগলে রেখেছেন তিনি। মা’সহ (কাউসারের মা সুফিয়া খাতুন) ওদেরকে নিয়ে উঠেছেন আশ্রয় কেন্দ্রে।

একই আশ্রয় কেন্দ্রে দুই নাতি-নাতনিকে (রাকিব ও ফারিয়া) সঙ্গে নিয়ে ঠাঁই হয়েছে ৭০ বছরের বৃদ্ধা সালেহা খাতুনের। তারাও ছিলেন শহরের রূপনগরে।

তিনি বলেন, পাহাড়ধসে মাটিচাপায় মারা গেছেন তার ছেলে দরবেশ আলী। ছেলে হারানোর শোক আর কান্না আজও থামেনি তার। পাহাড় ধসের পর থেকে দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে উঠেছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। জানেন না কতদিন থাকতে পারবেন সেখানে। ছেলে দরবেশ আলীর দুই অবুঝ শিশুসন্তান রাকিব ও ফারিয়া আজও বাবার পথ চেয়ে থাকে। ওরা তো কিছুই বোঝে না। ওদের মা রাবেয়া বেগম অনেক দিন আগে তাদেরকে ত্যাগ করে চলে গেছে অন্যত্র। নিজ বাড়িঘরে স্বজনদরে নিয়ে কত খুশির ঈদ করতাম। আজ সব খুশি হারিয়ে গেছে মন থেকে। আমি আর বাঁচব কতদিন? কিন্তু জানি না ওদের (রাকিব ও ফারিয়া) ভবিষ্যৎ কী হবে।

শুধু মীম, সুমাইয়া, রাকিব, ফারিয়া নয় ওইদিন প্রবল বর্ষণে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় স্বজন হারিয়েছে আরও অনেকে। সরকারি তালিকা অনুযায়ী পাহাড়ধসে এ মানবিক বিপর্যয়ে সদরসহ জেলায় মৃতের সংখ্যা ১২০।এছাড়াও সম্পূর্ণ বিধ্বস্তসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি বাড়িঘর ও স্থাপনা। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার বিভিন্ন সড়কের।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।