জোয়ারে ভাসছে অর্ধলাখ মানুষের ঈদ আনন্দ
জোয়ারে ভাসছে কক্সবাজার সদরের পোকখালীর উপকূলীয় গোমাতলীর অর্ধলাখ মানুষের ঈদ আনন্দ। ঈদের নামাজের পর পরই জোয়ারের পানি লোকালয় প্লাবিত করায় এক প্রকার বন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে সেখানকার আট গ্রামের মানুষকে। ফলে এবারের ঈদ আনন্দে অনেকটাই বিলীন হয়ে গেছে সেখানে।
২০১৬ সালে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে বেড়িবাঁধে সৃষ্টি হওয়া এক ভাঙনে বিগত এক বছর ধরে গোমাতলীর ঘেরগুলো তলিয়ে আছে। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মোরা’র আঘাতে বেড়িবাঁধে নতুন ভাঙনটি পুরনোটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঘেরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাট তলিয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জোয়ার-ভাটায় গ্রামীণ রাস্তার পাকা আস্তরণ উঠে গিয়ে ক্ষত বিক্ষত হয়ে বেড়েছে দুর্ভোগ।
উত্তর গোমাতলীর রফিকুল ইসলাম, আবদুর রশিদ ও মুহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, মোরা’র আঘাতের পর পানি প্রবেশ না হলেও জোয়ারেই প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।
সোমবার ঈদের নামাজের জামাত শেষ হতে না হতেই শুরু হয় জোয়ারের পানি আসা। ফলে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যেতে পারেনি সেখানকার মানুষজন। জোয়ারের কারণে পানিবন্দি হয়ে অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। ভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসা নিয়ে অনেকেই দিন পার করছেন।
অন্যদিকে পানিবন্দি অবস্থায় থাকার কারণে আয়ের উৎসও কমে যাচ্ছে ওই এলাকার মানুষজনের। কাজ হারিয়ে অনেকেই শহরের দিকে পাড়ি জমাচ্ছেন। তবে যারা ঘুরে দাঁদানোর চেষ্টা করছেন, তারাও খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না।
পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলাউদ্দিন ও মোহাম্মদুল হক দুখুমিয়া জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে বেড়ি বাঁধটির ৬ নম্বর স্লুইস গেইট এলাকায় প্রায় একশ মিটার ভাঙনের কবলে পড়েছে। গত দেড় বছরেও তা মেরামত করা হয়নি। গত ৩০ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে ৪৪ একর এলাকার ৮ নম্বর স্লুইস গেইটের বিশাল অংশ ভেঙে গেছে।
ভাঙনের কারণে জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে গোমাতলীর কয়েক হাজার পরিবার। এখানকার উত্তর গোমাতলী, আজিমপাড়া, কাটাখালী ও রাজঘাট, চরপাড়া, কোনাপাড়া, বদরখালী পাড়া ও পশ্চিমপাড়ার নিচু অংশ জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। পূর্ণিমা ও অমানিশার জোয়ারে লবণ মাঠ, ২৫টির বেশি চিংড়ি ঘের, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পায়ে চলার পথ প্লাবিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাঠদান। এতে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় রয়েছেন অভিভাবক মহল।
পশ্চিম গোমাতলী চরপাড়ার বাসিন্দা প্রবাসী গিয়াস উদ্দিন বলেন, গ্রীষ্মে লবণ ও বর্ষায় বাগদা উৎপাদনে সমাদৃত গোমাতলী এখন দুর্গত এলাকায় পরিণত হয়েছে। যেখানে গিয়ে নানা এলাকার হাজারও মানুষ রোজগার করেছে, আজ সেই এলাকার মানুষদের নিরুপায় হয়ে আজ অন্যের কাছে হাত পাততে হচ্ছে।
গোমাতলী সমবায় কৃষি ও মোহাজের উপনিবেশ সমিতির সভাপতি সেলিম উদ্দিন জানান, বৃহত্তর গোমাতলীতে প্রায় ১০ হাজার একর লবণ মাঠ রয়েছে। এতে গ্রীষ্মে লবণ ও বর্ষায় মাছ চাষ হয়। কিন্তু রোয়ানুর পর থেকে এলাকার অর্ধলাখ মানুষের দুর্ভোগ যেনো কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। মোরার আঘাতে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের তৈরি করা তালিকা অনুযায়ী এখানকার ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় এক হাজার পরিবার। কিন্তু তারা তেমন কোনো সাহায্য সহযোগিতা পায়নি।
পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিক আহমদ জানান, ভাঙনের পর থেকে বেড়ি বাঁধটি সংস্কারের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এখনও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির মালিকদের অধিকাংশ হতদরিদ্র। তাই শ্রমজীবী এসব মানুষ নিজেরা এখনও মাথা গোঁজার জায়গা করে নিতে পারেনি। তাদের কথা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জানানো হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে পারা যায় না। গোমাতলীর দুর্ভোগের চিত্রগুলো দেখলে খারাপ লাগে। আগের ভাঙনটি মেরামতে পাউবো বরাদ্দ দিয়েছে বলে জেনেছি। অন্য ভাঙনের জন্যও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে বর্ষায় এ কাজে হাত দেয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। যতো দ্রুত সম্ভব কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে।
কেএ/পিআর