ঈদে ঘুরে আসুন তেঁতুলিয়া
উত্তরের সীমান্ত উপজেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। তিন দিকে ভারতীয় সীমান্ত বেষ্টিত শান্তিপ্রিয় এই ছোট্ট উপজেলা শহর যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। ১৮৯.১২ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তেঁতুলিয়ার লোকসংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার ৪৫৪ জন (২০১১ শুমারি)। উত্তরে ভারতের শিলিগুড়ি, দক্ষিণে ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর এবং পশ্চিমে দার্জিলিং জেলা শহর।
প্রতি ঈদে পর্যটকরা পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন তেঁতুলিয়ায়। তেঁতুলিয়ার মহানন্দার পাড়ে দাঁড়িয়ে পর্যটকরা উপভোগ করেন ভারতের দার্জিলিং আর হিমালয়ে সৌন্দর্য। খনিজ পাথর আর বিস্তৃর্ণ সমতল এলাকার জুড়ে চা বাগানও পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে।
হিমালয় কন্যা খ্যাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমণ্ডিত অপরূপ তেঁতুলিয়ার প্রধান আকর্ষণ মহানন্দা পাড়ের পিকনিক স্পট। পিকনিক স্পটের পশ্চিমে বয়ে চলা খরস্রোতা মহানন্দা যেন ভাগ করেছে বাংলাদেশ ও ভারতকে। মহানন্দার তীরে ঐতিহাসিক তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, ঐতিহ্যবাহী শালবাহান, ভীমের জঙ্গল, আনন্দধারা আর খনিজ পাথর। ছায়ানীড় তেঁতুলিয়া জুড়ে পাখির কূহতান। বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় সবুজের মাঝে রয়েছে পাহাড়ি পরিবেশ, রয়েছে সমতল ভূমির উপর গড়ে ওঠা বিশালাকার চা বাগান।
কথিত আছে, একটা সময় জমিদারের লোকেরা তেঁতুল গাছে বেঁধে রেখে নির্যাতন করতো প্রজাদের। সেই তেঁতুল গাছ থেকেই নাকি তেঁতুলিয়া নামকরণ। আবার অনেকের ধারণা, বর্ধমানের মহারাণী এ অঞ্চলের প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা হিসেবে তেঁতুল বিচি নিতেন। এজন্য এই অঞ্চলের নামকরণ হয়েছে তেঁতুলিয়া। তবে নামকরণ যাই হোক, তেঁতুলিয়া হাল আমলের একটি শান্তিপুর্ণ এবং পরিচ্ছন্ন শহর। এর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের আকৃষ্ট কাড়ে। তেঁতুলিয়া দেশের একমাত্র উঁচু স্থান, যেখান থেকে খালি চোখে বিশ্বের উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ এভারেস্ট, পর্বতমালা কার্শিয়ান, কাঞ্চনজঙ্ঘা, দার্জিলিং দেখা যায়।
তেঁতুলিয়া উপজেলার তীরনই এলাকার জুয়েল রানা বলেন, মহানন্দার পাড়ে ডাকবাংলো থেকে খালি চোখে হিমালয় পাহাড় দেখা যায়। সূর্যোদয়ের সময় যে কেউ এমন দৃশ্য উপভোগ করলে তার সারা জীবন মনে থাকবে। বিশেষ করে শীতের সময় এখান থেকে স্পস্ট পাহাড় দেখা যায়। রাতেও পাহাড়ের আলো চোখে পড়ে।
জেলা শহর থেকে তেঁতুলিয়া যেতে সুপ্রশস্থ জাতীয় মহাসড়ক, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আর বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনের কারণেও দেশের বিভিন্ন এলাকার পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে তেঁতুলিয়া। পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় তেঁতুলিয়ায় চুরি, ছিনতাই আর খুনখারাবি নেই বললেই চলে। বিচিত্র বর্ণের নানা আকৃতির সৌন্দর্য দেখার জন্য পর্যটকসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার মানুষ আসেন তেঁতুলিয়ায়। প্রতি বছর পরিবার নিয়ে আসেন ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে ভ্রমণ পিপাসুরা।
তেঁতুলিয়ার শালবাহান এলাকার পাথর শ্রমিক আব্দুর রহিম বলেন, আমাদের শালবাহান রওশনপুর এলালাকার আনন্দ ধারায় প্রতিবছর ঈদে অনেক মানুষ ঘরতে আসেন। পরিবারের সকলে মিলেই এখনে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেন।
তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শাহিন বলেন, এখনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ উন্নত। কোথাও খুনখারাবি নেই। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা নেই বললেই চলে। বিশেষ করে তেঁতুলিয়ার সঙ্গে জেলা শহর এবং অন্য এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। তেঁতুলিয়াকে উন্নত পর্যটন অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা সর্বাত্বক চেষ্টা করছি।
এফএ/এমএস