‘এমন মার দেব কাউকে দেখাতে পারবি না’


প্রকাশিত: ০৫:৪৪ এএম, ১৯ জুন ২০১৭

শাহাদাত হাওলাদার নামে এক যুবলীগ কর্মীকে চাঁদাবাজি মামলায় বাসার সামনে থেকে গভীর রাতে ধরে এনে অমানুষিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে চাঁদপুর ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের ফলে তার বাম হাতের কনুইয়ের উপরিভাগ এবং বাম পায়ে মারাত্মক জখম হয়েছে।

বর্তমানে তিনি চাঁদপুর ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। তবে মারধরের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

সাহাদাত হাওলাদার চাঁদপুর সদর উপজেলা যুবলীগের সদস্য এবং সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।

চিকিৎসারত অবস্থায় শাহাদাত জাগো নিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে চাঁদপুর জেলা গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামালের নেতৃতে ক’জন ডিবি পুলিশ তাদের গুয়াখোলাস্থ বাসার সামনে থেকে চাঁদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের নিচের তলায় ডিবি অফিসে যেতে বলেন। কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘এসপি স্যারের নির্দেশ।’

তিনি এসপির কথা শুনে তাদের সঙ্গে যান। কিন্তু তারা এসপির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ না করিয়ে তাদের অফিসে নিয়ে বেদম প্রহার শুরু করে। ‘এমন মার দেব কাউকে দেখাতে পারবি না’ বলে লাঠি দিয়ে পেছনে মারতে থাকে ওসি মোস্তফা কামাল।

শাহাদাত আরো বলেন, ‘মাটিতে উপুড় করে শুইয়ে একজন ডিবি পুলিশ পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকে আর ডিবির ওসি আমার পিছনে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। লাঠি ভেঙে যাওয়ার পর হকিস্টিক দিয়ে মারতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

পরে চারজন ডিবি পুলিশ আমাকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। ডাক্তারকে শুধু হাত দেখাতে বলে। তা না হলে আমাকে ক্রসফায়ার করে দেবে বলে ভয় দেখায়। আমি ভয়ে ডাক্তারকে শুধু হাতের যখম দেখাই। পরদিন শুক্রবার আমাকে আদালতে হাজির করলে আদালত আমাকে জেল-হাজতে পাঠায়।

সাহাদাতের বাবা সিরাজ হাওলাদার জাগো নিউজকে জানান, শাহাদাতকে পিটিয়ে তার পিছন পুরো বিবর্ণ করে ফেলেছে। কনুইয়ের উপরিভাগেও দাগ হয়ে গেছে। এমন অমানুষিক নির্যাতনের পরও তাকে চিকিৎসা না করিয়ে হাজতে পাঠিয়ে দিয়েছিল। শনিবার আদালত তাকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।

শাহাদাতের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার গোবিন্দিয়া এলাকায় একটি মাছের ঝিল নিয়ে একই এলাকার জহির প্রকাশের সঙ্গে তাদের বিরোধ রয়েছে বলে জানান তার বাবা।

সাহাদাতের স্ত্রী আসমা নূর জাগো নিউজকে বলেন, মানুষ মানুষের ওপর এমন নির্যাতন চালাতে পারে ভাবা যায় না। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই। দোষী পুলিশের শাস্তি চাই।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান মোল্লা জাগো নিউজকে জানান, সাহাদাতের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার গোবিন্দিয়া। মজিবর শেখ চাঁদাবাজির অভিযোগে সাহাদাতসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করলে গোয়েন্দা পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাকে আটক করে।

এ বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাম জাগো নিউজকে জানান, শাহাদাতের বিরুদ্ধে চাঁদপুর মডেল থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা রয়েছে। মামলার বাদী গোবিন্দিয়া গ্রামের মজিবুর রহমান। এ মামলা ডিবির কাছে আসলে তাকে ডিবি পুলিশ আটক করে আদালতে সোপর্দ করে। তিনি শাহাদাতের উপর নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। বিষয়টি এসপি স্যারের নজরে আসায় তিনি আমাকে অনুসন্ধান করার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি বিষয়টি দেখছি।

হাসপাতালের চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, সাহাদাতের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার সুস্থ হতে সময় লাগবে।

ইকরাম চৌধুরী/এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।