২৭৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক
একই সঙ্গে মাত্র একজন শিক্ষক ৩টি শ্রেণির পাঠদান করেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ঘটনাটি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চরাঞ্চলের ১১৫ নং বটতলী খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
জানা গেছে, উপজেলার চরাঞ্চলের অবহেলিত চরআড়ালিয়া ইউনিয়নের বটতলী খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় পৌনে ৩শ ছাত্র/ছাত্রী অধ্যায়ন করছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ১ জন প্রধান শিক্ষক ও ১ জন সহকারী শিক্ষিকা। ৫ জন শিক্ষকের কোঠা থাকলেও হাতে কলমে রয়েছে মাত্র ২ জন শিক্ষক।
প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন দাফতরিক কাজে ব্যস্ত থাকলে মাত্র ১ জন শিক্ষক দিয়ে চলে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। প্রধান শিক্ষক ছাড়া সকল শিক্ষক নারী হওয়ায় এই শিক্ষক সঙ্কটে পড়তে হয়েছে বিদ্যালয় পরিচালনা করতে। ৫ শিক্ষকের মধ্যে বছরের শুরুতে এক শিক্ষিকা অন্যত্র বদলি হলে এরই মধ্যে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে চলে গেলেন ২ জন শিক্ষিকা। ফলে শিক্ষক শুণ্যতায় একমাত্র শিক্ষিকা তানবীন আক্তার এখন বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক।
তিনিই এখন দুই শিফটের সময় সূচিতে শিশু শ্রেণি, ১ম ও ২য় শ্রেণির পাঠদান ও দ্বিতীয় শিফটে ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির পাঠদান করছেন। একই সঙ্গে ৩ শ্রেণির পাঠদান করায় মেধা শুণ্যতাসহ শিক্ষা বঞ্চিত হয়ে পড়ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের দাফতরিক কাজে উপজেলা শিক্ষা অফিসে যাতায়াত করায় বিদ্যালয়ের সকল দায়িত্ব এখন একমাত্র শিক্ষিকা তানভীন আক্তারের।
এছাড়াও ৫ম শ্রেণির বিশেষ পাঠদান করার নির্দেশ থাকলেও ঠিকমতো তা করতে না পারায় অভিভাবকদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন শিক্ষিকা। বিদ্যালয়ের লেখাপড়া নিয়ে অভিভাবকরাও চিন্তিত।
সরেজমিনে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন পহেলা মে থেকে ১৪ মে মার্কস প্রশিক্ষণ ও মাসিক মিটিং থাকায় বিদ্যালয়ে একেবারেই আসেননি। ফলে একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে পুরো বিদ্যালয়। গত বুধবার ১৩ মে স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক ট্রেনিংয়ে। তখন একমাত্র শিক্ষিকা একসঙ্গে তিনটি শ্রেণির পাঠদান করছেন। তার সহযোগী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ছাত্র-ছাত্রীরা। এক ছাত্র বই পড়ছে, বাকিরা পাঠদান শুনছে। এভাবেই প্রতিদিনের পাঠদান চলে স্কুলটিতে। একমাত্র শিক্ষিকা এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষ ঘুরে ঘুরে পাঠদান করেন। শ্রেণিগুলোর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৩য় শ্রেণিতে ৫৮ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ৬১ এবং ৫ম শ্রেণিতে ৪৮ জন শিক্ষার্থী।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষক সঙ্কট থাকায় পাঠদান নিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে ৬ মাসের মাতৃত্ব ছুটি শেষ হলে এ সমস্যা থাকবে না। মাতৃত্বকালীন ছুটিতে অস্থায়ী শিক্ষক প্রতিস্থাপন করার সুযোগ থাকলেও পাচ্ছি না।
বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তানভীন আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, কষ্টতো হচ্ছে কী করবো? সবসময় ব্যস্ত আর এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে গিয়ে গিয়ে হাজিরা ডাকি, পাঠদান করি ।
পরিচালনা কমিটির এক সদস্য বলেন, ৬০% নারী শিক্ষক হওয়ায় এ সমস্যা প্রতিটি বিদ্যালয়ে দেখা দিচ্ছে। পুরুষ শিক্ষক হলে এ সমস্যা দেখা দিত না। আমি মনে করি, প্রতিটি বিদ্যালয়ে পুরুষ শিক্ষক নিয়োগের হার বৃদ্ধি করা দরকার।
অভিভাবক মাসুদ মিয়া জাগো নিউজকে জানান, আমাদের সন্তানেরা পরীক্ষায় পাস করে কিন্তু তাদের ভেতরে যথাযথ শিক্ষা নেই। মেধাহীন শিক্ষা নিয়ে আমদের সন্তানদের বেরিয়ে আসতে হবে। শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে হলে ভালো শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, নিয়মিত পাঠদান অব্যাহত রাখতে হবে।
এমজেড/এমএস