১ কেজি গমও খাদ্যগুদামে বিক্রি করতে পারেনি কৃষক
সরকারি নিয়ম-নীতির কোন তোয়াক্কা না করে ঠাকুরগাঁওয়ের খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা ক্ষমতাসীন দলের নেতার যোগসাজশে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গম কিনছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে, এক কেজি গমও খাদ্যগুদামে বিক্রি করতে পারেননি বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। আর সে কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের গম চাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর পাশাপাশি খাদ্যগুদামে যাচ্ছে নিম্নমানের গম।
শুধু ঠাকুরগাঁও সদরেই নয়, একই অভিযোগ রয়েছে জেলার আরও ৪টি উপজেলাতেও। বিষয়টি নিয়ে ঠাকুরগাঁও গম চাষিদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পীরগঞ্জ খাদ্য গুদামে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মাইকে প্রচারের মাধ্যমে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করে সরাসরি কৃষকের কাছে চলতি গম মৌসুমে ৪ হাজার ৩৭২ টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে নিয়মের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় এমপি অধ্যাপক ইয়াসিন আলীর নেতৃত্বে সিন্ডিকেট তৈরি করে ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে সরকারি দলের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গম ক্রয় করছেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে গত শুক্রবার স্থানীয় কৃষক সংগঠন `আমরা কৃষকের সন্তান` সংগঠনটি এসব অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধের দাবি জানাতে পীরগঞ্জ পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়কে শত শত পোস্টার লাগায়। আমরা কৃষকের সন্তান সংগঠনের আহ্বায়ক রাসেদ আলী অভিযোগ করেন, আমি গম সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধনী সভায় কৃষককে অবগত করার জন্য মাইক প্রচারের কথা বলায় উপস্থিত আমলাসহ নেতাদের তোপের মুখে পড়তে হয়। দুর্নীতিবাদ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নুর ইসলাম এইসব বিষয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও গম সংগ্রহ কমিটির সভাপতি এবিএম ইফতেখায়রুল ইসলাম খন্দকার তার বিরুদ্ধে আনিত আভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এগুলো করার আগে আমার সঙ্গে কথা বলা যেত।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নুর ইসলাম সরকারের কাছে মাইকিং ও পোস্টারিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি দলের ছেলেরা মাইক বন্ধ করে দিয়েছেন।
বিভিন্ন উপজেলার ক্ষুব্ধ গম চাষিরা অনেকে উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তা কাছে লিখিত নালিশ করেছেন বলেন জানিয়েছেন অনেকে ।
স্থানীয় গম চাষিদের অভিযোগ, প্রতি বছর সরকারি খাদ্যগুদামে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কৃষকদের কাছ থেকে বাজার দর অনুযায়ী ধান, চাল, গম কেনার কথা রয়েছে। কিন্তু গত দুই বছর ধরে ঠাকুরগাঁওয়ের বেশির ভাগ খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার যোগসাজশে ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের হস্তক্ষেপে কৃষকরা ধান, চাল, গম দিতে পারছেন না।
কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, চলতি বছর কৃষকদের কাছ থেকে এক কেজিও গম নেননি খাদ্যগুদামের কর্মকর্তারা। এখন পর্যন্ত দেড় হাজার মেট্রিক টন গম কেনা হলেও কৃষকদের কাছ থেকে কোন গম কেনা হয়নি।
তারা জানান, এবার ঠাকুরগাঁও খাদ্যগুদামে ২১ হাজার ১৭ মেট্রিক টন গম কেনা হবে। এসব গম কৃষকদের কাছ থেকে কেনার কথা থাকলেও তা কেনা হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী কয়েক নেতা কয়েকজন ব্যবসায়ীকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট করে দিয়েছেন। সেই ১০/১২ জন ব্যবসায়ী খাদ্যগুদামে গম দিচ্ছেন।
আরও অভিযোগ পাওয়া গেছে, ব্যবসায়ীরা টন প্রতি তিন হাজার করে টাকা দিচ্ছেন নেতা ও গুদাম কর্মকর্তাকে। ফলে, এবার প্রভাবশালী চক্রটির পকেটে যাবে প্রায় কয়েক কোটি টাকা। কৃষকদের অভিযোগ, তারা গম নিয়ে খাদ্যগুদামে গেলেও গুদাম কর্মকর্তা তাদের কাছ থেকে কোনো গম কিনছেন না।
কৃষক শফি জাগো নিউজকে জানান, তিনি গম নিয়ে গুদামে গেলেও তার গম নেননি গুদাম কর্মকর্তা। যেসব ব্যবসায়ী `নেতার স্লিপ` নিয়ে যাচ্ছেন, তাদের কাছ থেকে গম কেনা হচ্ছে।
সদর উপজেলার শিবগঞ্জ এলাকার নাসিরুল, গোলা মেম্বর, মিজানুর, রুহুল আমিন ১০/১২ জন ব্যবসায়ীই গম সাপ্লাই দিচ্ছেন।
তিনি জানান, এসব ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন স্থান থেকে গম কেনা এবং টাকা দিয়ে স্লিপ নেয়ার কারণে গুদামে নিম্নমানের গম ঢুকছে।
জেলার গম চাষি আলমাস মণ্ডল, মান্নান মণ্ডল, জলিল, জামাল তালুকদার, বেলায়েত, আফজালেরও একই অভিযোগ। তারা জানান, তাদের কাছ থেকে গম না কেনায় তারা গত বছর থেকে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। গমচাষিরা এ বিষয়ে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের খাদ্যগুদাম কর্মকতার দিকে। প্রতি টন গম থেকে কর্মকর্তাগণ পার্সেন্টেজ নিচ্ছেন বলে তারা অভিযোগ করেন।
তবে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক চৌধুরী মোস্তাফের হোসেন জাগো নিউজকে জানান, গম কেনা নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা ঠিক নয়। নিয়ম মতো গম সংগ্রহ অভিযান চলছে।
রবিউল এহসান রিপন/এমজেড/এমএস