লিচু রাজ্য দিনাজপুরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হানা
রসোগোল্লা নামে পরিচিত দিনাজপুরের লিচু এবার সারা দেশের মানুষের ভাগ্যে না জোটার সম্ভাবনা বেশি। শিলাবৃষ্টি ও ঝড় হাওয়ার কারণে লিচু ফেটে যাওয়া এবং খোসা পচাঁ রোগ দেখা দিয়েছে। আর এ রোগ প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় লিচু বাগানের মালিক ও ব্যবসায়ীরা উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। বিভিন্ন বাগান ঘুরে লিচু ফেটে যাওয়া এবং খোসা পচাঁ রোগের দৃশ্য দেখা যায়।
দেশের বিভিন্ন জেলায় এখন লিচু উৎপাদন হলেও সারা দেশে দিনাজপুরের লিচুর রয়েছে ব্যাপক খ্যাতি ও কদর। মধু মাসের আগমনে খুশি হয় বৃহত্তর দিনাজপুরের লিচু চাষী,বাগানী ও ব্যবসায়ীরা তথা সারা দেশের মানুষ। কিন্তু টানা কয়েক দিনের শিলা বৃষ্টি আর ঝড় হাওয়ার কারণে লিচু চাষীরা চরম আশঙ্কায় দিন গুণছে। অনেকে লাভের আশা বাদ দিয়ে চেয়ে আছে আকাশের দিকে।
স্থানীয় লিচু চাষীরা জানান, ঝড় ও শিলা বৃষ্টির কারণে লিচু গাছ ব্যাপকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। এরপর থেকে গাছে লিচু বেড়ে উঠার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় লিচুর খোসা পচাঁ ও ফেটে যাওয়া রোগ। আর এ রোগ প্রতিরোধে কোনো ঔষধ এখনো আবিষ্কার হয়নি বা প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থাও নেই। এতে করে লিচুর উৎপাদন এ বছর ব্যাহত হবে বলেও জানান তিনি।
দিনাজপুর জেলা লিচু রাজ্য হিসেবে পরিচিত সেটা সবারই জানা। আর এ জেলায় উৎপাদিত লিচু অন্য সকল জেলায় উৎপাদিত লিচুর চেয়ে স্বাদে ও গুণে ও মানে সেরা। তাই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে দিনাজপুরের লিচুর রয়েছে স্বতন্ত্র পরিচিতি। রয়েছে আলাদা কদর। দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলার মাটি ও জলবায়ু লিচু উৎপাদনে উপযোগী হওয়ায় লিচু চাষে রীতিমত বিপ্লব ঘটেছে।
সেই লিচু রাজ্যে এবার দেখা দিয়েছে প্রকৃতিক বিপর্যয। যা রোধের কোনো ব্যবস্থা নেই। লিচু যত লাল রং রাঙ্গাচ্ছে, চাষী, ব্যবসায়ী ও বাগানীরা চোখে ততই অন্ধকার দেখতে পাচ্ছে। তারা জানে না শেষ পর্যন্ত কি আছে তাদের ভাগ্যে।
কুমিল্লা থেকে আসা লিচু ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, দিনাজপুরের লিচু ভাঙা শুরু হয়েছে। তবে তা দিনাজপুরের বাজারে বিক্রি হচ্ছে না। আগামী দুই একদিনের মধ্যেই দিনাজপুরের বাজারে লিচু উঠতে শুরু করবে। শিলা ও ঝড় বৃষ্টির কারণে লিচু ফেটে যাওয়া এবং খোসা পচাঁ রোগ দেখা দিয়েছে। সঙ্গে শুরু হয়েছে পুরিয়া বাতাস। যা লিচুর জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। আর এ বাতাসের কারণে লিচুর খোসা দ্রুত পঁচন ধরে এবং শুকিয়ে যায়। এতে করে লিচুর উৎপাদন মারাত্বকভাবে কম হবে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর কৃষি অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, প্রাকৃতিক দুযোর্গ ও ভিটামিনের অভাব এবং হরমনাল সমস্যার কারণে খোসায় পঁচন ধরে আর ফেটে যায়। তবে লিচু উৎপাদন ব্যাহত হবার মত কোনো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। এক্ষেত্রে আমরা খেয়াল রাখছি বলেও জানান তিনি।
এমদাদুল হক মিলন/এআরএ/আরআই