বালাগঞ্জ-ওসমানীনগরের অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত


প্রকাশিত: ০২:০৫ পিএম, ০৬ জুন ২০১৭

টানা বৃষ্টিপাতের কারণে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কুশিয়ারা ডাইকের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে অকাল বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় সিলেটের ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ উপজেলার অর্ধ শতাধিক গ্রামের পাঁচ সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নির্মাণাধীন বালাগঞ্জ-খসরুপুর সড়কের (প্রকাাশত কুশিয়ারা ডাইক) একাধিক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে এই সড়কের বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের করছারপার, পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের ফাজিলপুর, হামছাপুর, জালালপুর ও ওসমানীনগরের সাদিপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারা ডাইকের লামা তাজপুর এলাকাসহ একাধিক স্থান ভাঙন আক্রান্ত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় কুশিয়ারা ডাইকের ওসমানীনগরের লামা তাজপুরস্থ ভেঙে যাওয়া ডাইকে বালুভর্তি বস্তা দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার বিকেলে ওসমানীনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. গয়াছ মিয়া, সাদীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রব, সমাজ সেবক শিপু চৌধুরী, আব্দুল জব্বার, শাহ ছুরুক মিয়া, আব্দুর রহিম ও কবির খানসহ এলাকাবাসী ডাইকে বালু ভর্তি বস্তা ফেলেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদী তীরবর্তী ওসমানীনগর উপজেলার লামা তাজপুর, পূর্ব তাজপুর, দক্ষিণ তাজপুর ও চর গাঁওয়ের দুই সহস্রাধিক পরিবার ৪-৫ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এসব গ্রামের ৯০ শতাংশ পরিবার দরিদ্র।

পানিবন্দি হওয়ায় তাদের ঘরে খাবার নেই। এতে রমজান মাসে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব পরিবারকে। বিশুদ্ধ পানির অভাব থাকায় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে।

সাদীপুর ইউপি সদস্য সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, কুশিয়ারায় পানি বৃদ্ধি এবং ডাইক ভেঙে এলাকার প্রায় ২৫টি গ্রামের ৩ সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। পানিবন্দি গরীব পরিবারগুলোর জন্য ত্রাণ বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানান তিনি।

shylet

ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গয়াস মিয়া বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে কুশিয়ারা ডাইকের আক্রান্ত এলাকায় বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে এবং পানিবন্দি মানুষদের সহায়তা প্রদানে সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান করছি। তিনি বলেন, জরুরি প্রদক্ষেপ না নিলে পুরো উপজেলা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ভাঙনকবলিত স্থান পরিদর্শন করেছি। পানিবন্দি অসহায় পরিবারের জন্য ত্রাণের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ভাঙনস্থল পরিদর্শন করেছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে কুশিয়ারা নদীর তীরঘেঁষা বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সম্মুখের রাস্তা, বালাগঞ্জ বাজারে ভিতরের রাস্তা, বালাগঞ্জ ডিএন মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ, তয়রুন নেছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশের রাস্তা ও মাঠ, ইউআরসি অফিসের রাস্তা, উপজেলা প্রশাসনের মূল সড়ক ও উপজেলা প্রশাসনের মাঠ পানিতে ডুবিয়ে গেছে এবং উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের নিচতলার অফিসগুলোর ভেতরে পানি প্রবেশ করেছে।

বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন জানান, তার ইউনিয়নের সবকটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় এসব গ্রামের প্রায় ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, বুরো ফসল হারানোর পর মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এসব এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদাল মিয়া বলেন, পানি বৃদ্ধিতে কুশিয়ারা ডাইকের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইউএনওকে নিয়ে আমরা আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেছি।

ছামির মাহমুদ/এএম/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।